আবার দিদিমণি ছবি এঁকেছেন। দিয়ে এসেছেন নেদার্যান্ডসে, ভ্যান গঘের দেশে। ছবি নিয়ে হইচই। সেই ছবি নাকি বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। সেই ছবি নিয়েই লিখলেন রবি কর।।
যারা ভালো রিপোর্টার হয়, তাঁদের ক্ষমতাই আলাদা। তারা বেলঘরিয়ায় বসে বুলগেরিয়ার খবর পায়। তারা খবরের পিছনে পিছনে ছোটে না, খবর তাঁদের পিছনে পিছনে ছোটে।
এই যেমন আমি। কেউ কখনও আমাকে কোনও প্রেস কনফারেন্সে যেতে দেখেছে? কোনও মিটিং, মিছিল, অনুষ্ঠানে যেতে দেখেছে? দেখেনি। ঘর আর অফিস এর বাইরে আমি কোথাও যাই না। কিন্তু সব খবর হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে চলে আসে। বেঙ্গল টাইমসের পশ্চাৎপাকা এডিটর সেই সব খবর ছাপে না, কিন্তু খবর আমি ঠিক পাই।
এই যে দিদিমণি হেগে গেলেন, মানে হেগ নামক শহরে গেলেন, আমাকে নিয়ে যাননি। তাতে কি আমার কোনও অসুবিধা হল? হল না। কারণ আমার যাবার দরকারই হয় না। যারা গেছে, তারা সেই টুকু জায়গাই দেখতে পাচ্ছে, যেটুকু জায়গায় দিদি যাচ্ছে। তার বাইরে কিছু চেনেও না, জানেও না। কিন্তু আমি? আগে থেকেই নেদারল্যান্ডে আমার সোর্স আছে। তারা আমাকে যেসব খবর পাঠাচ্ছে, তা কোনও সাংবাদিকের পাওয়ার সাধ্য নেই।
সবাই কী লিখছে? ফুটবল নিয়ে চুক্তি হল। কন্যাশ্রী পুরস্কার পেল। আরে ভাই এগুলো কোনও খবর হল? ফুটবল নিয়ে চুক্তি এর আগে ব্রাজিল, স্পেন অনেকের সঙ্গে হয়েছে। এর আগে বাম আমলেও নাকি স্বাক্ষরতা নিয়ে রাজ্য কী একটা পুরস্কার পেয়েছিল। সুতরাং ওগুলো খবর নয়। আসল খবর হল দিদির নাম পরিবর্তন।
আপনারা কী জানেন, ডাচরা আজকাল দিদিমণিকে কী বলে ডাকছে? ডাকছে মমতা ভ্যান আর্জি বলে। হ্যাঁ মশাই ব্যানার্জিকে ওঁরা ভ্যান আর্জি বলে ডাকছে। কেন বলুন তো? দেখুন ডাচদের নামে একটা ভ্যান থাকবেই থাকবে। ফুটবলারদের নাম দেখুন ভ্যানে ভ্যানে ভ্যানভ্যান করছে। কিন্তু সব থেকে বিখ্যাত ভ্যান হলেন ভ্যান গঘ। ছবি আঁকিয়ে ভ্যান গঘ। তার অনুকরণেই ডাচরা দিদিমণির নাম করেছেন ভ্যান আর্জি। একবার তুলনা করে দেখুন, দিদিমণির বাংলায় কী কী আছে আর ডাচদের নেদারল্যান্ডে কী কী আছে। ওঁদের বিখ্যাত শিল্পসংস্থা হল ফিলিপ। তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া জন্য আমাদের চপ-মুড়ি আছে। ওঁদের আছে ফুটবল। সে তো আমাদেরও আছে। মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল। যেটুকু ফারাক আছে প্রসূন ব্যানার্জি, দীপেন্দু বিশ্বাস মিলে পূরণ করে দেবে। এর বাইরে ওঁদের আছে শুধু ভ্যান গঘ। আর এই একটা জায়গায় আমরা পিছিয়ে ছিলাম। মানে ওঁরা ভাবত আমরা পিছিয়ে আছি।
ভ্যান গঘের সেরা ছবি সান-ফ্লাওয়ার তার নাকি কোটি টাকা দাম। তাই নিয়ে ডাচদের ভারি দেমাক। দিদিমণি সেই দেমাকের মুখে ঝামা ঘসে দিয়েছেন। এমন একটা চাল দিয়েছেন যে, নেদারল্যান্ডের ভ্যানদের সব ভ্যানতাড়া বেরিয়ে গেছে। ওঁদের দেশের একজন কেষ্টবিষ্টুর হাতে নিজের আঁকা একখানা ছবি তুলে দিয়েছেন। তারপরেই ভ্যান গঘের আসন টলমল। শোনা যাচ্ছে এক সেদেশের এক শিল্প বোদ্ধা বলেছেন, ভ্যান গঘ নিজের একটা কান কেটে ফেলেছিলেন, অর্থাৎ তিনি এক কান কাটা। আর ইনি তাঁর থেকেও এক কাঠি এগিয়ে। অর্থাৎ…
এর পাশাপাশি ডাচরা খবর পেয়েছে, দিদিমণির আঁকা সেই বিখ্যাত সারদা-ফ্লাওয়ারের সঙ্গে ভ্যান গঘের সান ফ্লাওয়ারের অঙ্কনশৈলীতে যেমন মিল, দামেও তেমন মিল। ডাচরা চাইছে সিবিআই সিআইডি প্রয়োজনে ইন্টারপোল দিয়ে ছবিটা খুঁজে বের করা হোক। তার পর সেই ছবি তাঁদের দেশে ভ্যান গঘ মিউজিয়ামে রাখা হবে।
মুশকিল হয়েছে অন্য জায়গায়। স্কুলের জীবনবিজ্ঞান বইতে লিউয়েন হুকের নাম পড়েছিলেন তো? সেই যিনি মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনিও ছিলেন নেদারল্যান্ডের লোক। তাঁকে নিয়েও ডাচদের গর্ব আছে। হয়েছে কী, একদল ডাচ বিজ্ঞানী, মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দিদির ছবিটা দেখে বলেছে, এটা ব্যাঙের পৌষ্টিকতন্ত্র। সুতরাং এই ছবি মিউজিয়ামে না দিয়ে তাঁদের দেওয়া হোক। বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
আপনারা দিদিমণির আঁকা সেই ছবি দেখুন, তাঁর সঙ্গে ভ্যান গঘের আঁকা ছবি এবং ব্যাঙ্গের পৌষ্টিকতন্ত্রের ছবিও দেখুন। কার সঙ্গে বেশি মিল নিজেরাই ঠিক করুন।


