রক্তিম মিত্র
৩১ বড় নাকি ১ বড়? বাংলা কাগজ খুললে বা বাংলা চ্যানেল দেখলে আপনি এতদিন ধরে যা জেনে এসেছেন, সব গুলিয়ে যেতে পারে। পাহাড়ে পুরভোটের ফল কী হয়েছে, আপনি বুঝতেই পারবেন না। মনে হবে, তৃণমূল দারুণ জয় পেয়েছে। কী অবলীলায় দলের নেতা–মন্ত্রীরা বলে চলেছেন, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে যে উন্নয়ন চলছে, এটা সেই উন্নয়নের জয়। আর মিডিয়াও সেই সুরেই কথা বলছে। সন্ধেবেলায় টিভি আলো করে বসা বুদ্ধিজীবীরাও যেন বেঁধে দেওয়া সুরেই গান গাইছেন।
সহজ কথা, দার্জিলিংয়ে ৩২ টি আসন। মোর্চা পেয়েছে ৩১ টি, তৃণমূল মাত্র ১ টি। কার্শিয়াংয়ে ২০ টি আসন। মোর্চা পেয়েছে ১৭ টি, তৃণমূল ৩ টি। কালিম্পংয়ে মোর্চা ১৯, তৃণমূল ২। এরপরেও বলতে হবে, পাহাড়ে তৃণমূল বিরাট জয় পেয়েছে? হ্যাঁ, মিরিকে জয় এসেছে, এই সত্যিকে কেউ অস্বীকার করছে না। সেখানে আসন কিন্তু মাত্র ৯টি। তৃণমূল ৬, মোর্চা ৩।
হ্যাঁ, মানতেই হবে, পাহাড়ে ভোট হল, এটা অবশ্যই একটা ভাল দিক। তার জন্য রাজ্য সরকারের কৃতিত্ব নিশ্চয় আছে। পাহাড় দখল করার জন্য যা যা করা দরকার, সবই করা হয়েছে। বাকি কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলেও পাহাড় দখলের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয়েছিল। প্রায় এক ডজন মন্ত্রী দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পাহাড়ে। প্রশাসনকে যতটা দলের কাজে লাগানো সম্ভব, তার থেকে বেশিই লাগানো হয়েছে। এরপরেও ৩২ এর মধ্যে ১! এরপরেও বলা বচ্ছে, বিমল গুরুংয়ের ঘুম ছুটে গেল। এরপরেও বলা হচ্ছে, বিরাট জয়।
যে পাহাড়কে সারা রাজ্যের কাছে বিজ্ঞাপন হিসেবে তুলে ধরা হল, যে পাহাড়ে নাকি বিরাট উন্নয়ন হয়েছে, সেই পাহাড়ে এমনভাবে ধরাশায়ী হতে হল কেন? মুখ্যমন্ত্রী অন্তত পঞ্চাশবার পাহাড়ে গিয়েছেন। পাহাড়ে নাকি উন্নয়নের বন্যা বইছে। তাহলে পাহাড়ের মানুষ এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নিল কেন? কার্শিয়াং বা কালিম্পঙের ক্ষেত্রেও তাই।
এরপরেও বলা হচ্ছে, পাহাড়ের মানুষ আমাদের ওপর ভরসা রেখেছেন। ভরসাটা রাখল কই? এটা যদি প্রত্যাখ্যান না হয়, তাহলে প্রত্যাখ্যান কাকে বলে?