লালবাতি না থাকলে সম্মান পাবেন না!‌ সত্যিই আপনারা কী অসহায়!‌

সব্যসাচী কুণ্ডু

আপনি একজন শাহী ইমাম, ধর্মের উপাসক। লক্ষ লক্ষ মানুষ আপনাকে চেনেন, জানেন, আপনার কথা শোনেন। আপনি তো ধর্মের কথা বলবেন, মানুষকে ভালো বাসতে শেখাবেন, ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে আপন করে নেবেন। এত গোঁড়ামি, উগ্রতা কি আপনাকে মানাচ্ছে মৌলানা সাহেব। আপনি আজ যা কিছু বলেছেন তা কি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসাবে বেমানান লাগছে না?‌ আপনি একজন ধর্মের উপাসকের সাথে সাথে একজন দায়িত্বশীল নাগরিকও। দেশের আইন ব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও শ্রদ্ধা থাকা উচিত। ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশের আইন কে আপনি বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পারেন না। লালবাতি নিয়ে দেশে যে সার্কুলার চালু হয়েছে তার আওতায় আপনিও পড়েন। দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি তা মানতে পারেন, আপনার মানতে বাধা কোথায়?‌ আপনি তো প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর থেকে বেশি ভিআইপি নন।

রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে আপনি দেশের মানুষের উদ্যেশে জেহাদের ভয় দেখাছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নামে কুকথা বলছেন, লালবাতি ব্যবহার করা নিয়ে গা-জোয়ারি করছেন, যার তার নামে ফতোয়া জারি করছেন, তা কি আপনার মতো একজন দায়িত্বশীল নাগরিককে মানায়। ভুলে যাবেন না আপনি এমন এক রাজ্যে দাড়িয়ে ফতোয়া জারি করছেন যেখানকার মানুষ নিজেদের হিন্দু না মুসলিম, বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে অভ্যস্থ, ভুলে যাবেন না আপনি এমন এক দেশে দাড়িয়ে ফতোয়া জারি করছেন যেটা একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যেখানে একটাই জাতি ভারতীয়। নেতা মন্ত্রীরা রাজনীতির খেলায় মেতে যতই বিদ্বেষ ছড়াক না কেন আমরা এখনও মানি আমরা এক, আমরা ভারতীয়।

imam barkati
আজ আপনার কাণ্ডকারখানা দেখে হয়তো কোনও কবি কবিতা লিখবেন না, কোনও বুদ্ধিজীবী হায় হায় করবেন না, কেউ হয়তো পুরস্কারও ফিরিয়ে দেবেন না। কারণ আমরা জানি সবাই রাজনীতির সাথে অল্প বেশি যুক্ত, সংখ্যালঘু তোষণের সাথে সম্যক পরিচিত। তাই কেউ আজ প্রশাসনের বিষ নজরে আসার চেষ্টা করবেন না।

মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, সত্যিই আপনারা মুসলিমদের ভালবাসেন তো?‌ তাঁদের উন্নয়ন নিয়ে কতটুকু চিন্তিত?‌ অসহায় মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর চেয়েও হুঙ্কার দিতেই বেশি দেখা যায়। যাঁরা প্রগতিশীল মুসলিম, তাঁরা আপনাকে ‘‌বন্ধু’‌ বলে মনে করেন কিনা কখনও ভেবে দেখেছেন?‌ আপনার বাবা লালবাতি লাগাতেন, তাই আপনাকেও লাগাতে হবে। এটা কোনও যুক্তি হল?‌ আপনার বাবা নিশ্চয় এসি গাড়িতে চড়তেন না। তাহলে আপনি চড়েন কেন?‌ আপনার বাবা নিশ্চয় মোবাইল ব্যবহার করতেন না। আপনি করেন কেন?‌ বাবাকে যদি যদি অনুসরণ করতেই হয়, অন্য বিষয়গুলোতেও করুন। সত্যি করে বলুন তো, ধর্মের সঙ্গে লালবাতির কোনও সম্পর্ক আছে?‌ কাজের মধ্যে দিয়ে নয়, লালবাতি দেখিয়ে আপনাকে জোর করে সম্মান পেতে হচ্ছে। সত্যিই আপনি কত অসহায়!‌ সময় এগিয়ে যাচ্ছে, সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ কেউ থাকেন, ধর্মের নামে সমাজটাকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে চান। তাদের কিন্তু ইতিহাস মনে রাখে না। আপনাকেও কেউ মনে রাখবে না।

728x90

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.