স্মৃতিটুকু থাক
আমাদের বাড়িতে আমার সবথেকে ভাল বন্ধু ছিল আমার জেঠু। বাবাকে অনেককিছু বলতে পারতাম না। আবদার জুড়তাম জেঠুর কাছে। জেঠুও জানত, আমি কী চাই। তাই না চাইতেই অনেক কিছু হাজির হয়ে যেত। আমি কী বই পড়তে ভালবাসি, আমি কী খেতে ভালবাসি, সব জানত। বাইরে কোথাও গেলেই আমার পছন্দের জিনিস নিয়ে আসত।
জেঠুর গানের গলাটা ছিল খুব সুন্দর। তাঁর জন্যই আমারও প্রিয় শিল্পী মান্না দে। জেঠু যখন একা থাকত, মান্না দে–র গান চালিয়ে রাখত। এভাবেই আমার মান্না দে–কে চিনতে শেখা। প্রথমে না বুঝেই গাইতাম। পরে যখন গানগুলোর ভেতর লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণাটা বুঝলাম, তখন একা একা কাঁদতাম। সেই কান্নাও ছিল এক পবিত্র অনুভূতি। এই সংবেদনশীল মনটা তো জেঠুর কাছেই পেয়েছিলাম। কত অজানা গান যে জেঠুর কাছে শুনেছিলাম!
অথচ,সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে বাবার সঙ্গে জেঠুর মন কষাকষি। ওঁরা কেউ নিজেদের ঝামেলা মিটিয়ে নিতে পারল না। দুজনের কাছেই ইগোটা বড় হয়ে উঠল। ফল যা হওয়ার, তাই হল। জেঠুর সঙ্গে আমার সম্পর্কেও কোথায় যেন ফাটল ধরল। আর জোড়া লাগল না। বাবা আগেই বিদায় নিয়েছেন। কয়েকমাস আগে সেই জেঠুও চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন। এখনও মান্না দে–র গান বাজলেই জেঠুর কথা মনে পড়ে। কী জানি, সেই গানের মধ্যে হয়ত জেঠুকেই খুঁজি।
অনন্যা দাস, সোনারপুর
(এই বিভাগ কিন্তু একান্তই পাঠকদের জন্য। আপনারাও লিখে পাঠান আপনাদের অনুভূতি। বিশেষ কারও কথা মনে পড়ছে? অতীতের কোনও কাজের জন্য ভুলস্বীকার করতে ইচ্ছে করছে? বলে ফেলুন। দেখুন, অনেক হালকা লাগবে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)