ডাউ হিল নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো বন্ধ হোক

সুন্দর সাজানো একটি জায়গা ডাউহিল। এমন মনোরম জায়গা নিয়ে অহেতুক ভূতের গুজব। আর তা কিনা ছড়াচ্ছেন এক পরিচালক। দোহাই, ডাউহিল নিয়ে গুজব ছড়ানো বন্ধ করুন। ‌লিখেছেন প্রসূন মিত্র।।

গুজব ছড়ানোয় বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। আর তা যদি ভূতের গুজব হয়, তাহলে তো কথাই নেই। সেই গুজবের ডালপালা কোথায়‌ যে ছড়িয়ে যায়!‌
আবার নতুন গুজব শুরু হয়েছে ডাউ হিলকে ঘিরে। কার্শিয়াং থেকে মিনিট কুড়ি ওপরে উঠলেই ছবির মতো সাজানো একটি জনপদ হল ডাউ হিল। আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি। আমার কাছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বিচারে পাহাড়ের অন্যতম সেরা জায়গা এই ডাউহিল। প্রকৃতি দু–‌হাত উজাড় করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্রিটিশ স্থাপত্য।

dow hill3

আকাশ ছোঁয়া পাইনের সারি। সেই গাছের ফাঁকে মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করবে, এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে। গড়পড়তা টুরিস্ট এসব জায়গার হদিশ জানে না। তারা দার্জিলিং–‌গ্যাংটক এসবের বাইরে কিছু ভাবতেও পারে না। কিন্তু যারা একটু অন্যরকম জায়গার সন্ধানে থাকেন, যাদের কাছে শপিং মল নয়, প্রকৃতিটাই আসল, তাঁদের পছন্দের ঠিকানা হতেই পারে ডাউহিল। থাকার তেমন জায়গা নেই। ফরেস্টের একটি গেস্ট হাউস আছে। কিন্তু সরকারি ব্যাপার, যা হয়!‌ চাইলে পাবেন না। অথচ, বাংলোটা বেশিরভাগ সময়ে ফাঁকাই থাকে।
যাই হোক, এই ডাউহিলকে ঘিরে কতগুলো ভুলভাল প্রচার আছে। এটা নাকি ভূতের জায়গা। এখানে নাকি যে যায়, সে ফিরে আসে না। মুণ্ডহীন দেহ নাকি ঘুরে বেড়ায়। অবাক লাগে যখন দেখি বিভিন্ন কাগজের ভ্রমণ বিভাগে এটাকে ভূতের জায়গা হিসেবেই তুলে ধরা হয়। সেই লেখাগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন। প্রায় সবাই একই জায়গা থেকে টুকেছেন। নিজেরা যাননি। দাঁড়ি, কমা শুদ্ধু কপি পেস্ট করেছেন। এভাবেই ছড়িয়ে গেছে ভূতের প্রচার।
সম্প্রতি সেখানে একটি ছবির শুটিং হল। সাইকো থ্রিলার। পরিচালক অর্ক চট্টোপাধ্যায়। নবীন পরিচালক, প্রথম ছবির জন্য উত্তরবঙ্গকে বেছে নিয়েছেন, বেশ ভাল কথা। কিন্তু ফিরে এসে তিনিও কাগজে ভুলভাল খবর খাওয়াতে শুরু করেছেন। জানেন, ভূতের কথা বললে প্রচার বেশি পাওয়া যাবে। ১)‌ যা যা গুজব প্রচলিত আছে, সেগুলো উগরে দিয়েছেন।  ২)‌ শতাফ ফিগার নাকি ভয়ে সেখানে থাকতেন না। সমতলে নেমে আসতেন। আবার পরেরদিন শুটিংয়ের সময় যেতেন। ৩)‌ ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে উঠতে পারছিলেন না। বারবার নাকি পেছনের দিকে পিছিয়ে আসছিল। ৪)‌ কার্শিয়াংয়ের ড্রাইভাররা নাকি ডাউহিল যেতে চান না।
dow hill3
যত্তসব গাঁজাখুরি। ১)‌ অভিনেতা যদি ভয় পেয়ে থাকেন, সেটা একান্তই তাঁর নিজের সমস্যা। ২)‌ পাহাড়ে গাড়ি চালানো সহজ নয়। সমতলের ড্রাইভারদের পক্ষে তো আরও বেশি কঠিন। পেছন দিকে আসবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। পাহাড়ি ড্রাইভার হলে এই সমস্যা হত না। ৩)‌ কার্শিয়াংয়ের কোনও ড্রাইভার ডাউহিল যেতে চায় না?‌ এই আজগুবি তত্ত্ব কোথায় পেলেন মশাই?‌ যতবার গেছি, কোনওবার তো ‘‌না’‌ শুনতে হয়নি। হ্যাঁ, ভাড়া নিয়ে মতপার্থক্য হয়েছে। কেউ কেউ হয়ত বেশি চেয়েছেন। আর যাই হোক, পাহাড়ের লোক আপনাদের মতো ভিতু নয়। আসলে, এই অর্বাচীনদের দেখার চোখ নেই। তাই সুন্দর প্রকৃতি নয়, ভূত দেখতে পায়। কতবার আয়নার সামনে দাঁড়ান, কে জানে!‌
পরিচালককে আবার ধন্যবাদ, এতসুন্দর একটি জায়গা বেছে নেওয়ার জন্য। কিন্তু দোহাই, ফিরে এসে এমন আষাড়ে গপ্প ফাঁদবেন না। আপনার ছবি ভাল চলুক, শুভেচ্ছা রইল। কিন্তু একটা সুন্দর জায়গা নিয়ে এভাবে আতঙ্ক ছড়াবেন না।
Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.