ধর্ম দিয়েই ধর্মের মোকাবিলা হোক

ময়ূখ নস্কর

গব্বর সিংয়ের অত্যাচারে রামপুরবাসী অতিষ্ঠ। পুলিশের সাহায্য নিয়ে আইনের পতে তার মোকাবিলা করা যাচ্ছে না। তাই ঠাকুরসাব ভাড়া করে আনলেন দুই দাগী আসামীকে। বললেন, লোহে লোহে কো কাটতা হ্যায়। সাদা বাংলায় কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হয়।

পশ্চিমবঙ্গে ইদানীং গব্বর সিংদের খুবই বাড়বাড়ন্ত। একদল গব্বর সিং সমাবেশের নাম করে পুলিশ পেটাচ্ছে। আরেকদল গব্বর বাচ্চাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে মিছিল করছে। এবং দুজন গব্বরই এই মিছিল সমাবেশ করছে ধর্মের নামে। আইন অনুযায়ী, এদের সাবকে সিধে করে দেওয়া উচিত। কিন্তু কড়া অবস্থান নিতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ‘‌আমাদের ধর্ম আক্রান্ত’ এই ধুয়ো তুলে গব্বর সিংরা আরও বেশি লোক ক্ষ্যাপাতে পারে। তাই এদের মোকাবিলার জন্য সেই পথ নিতে হবে, যে পথ গব্বর সিংয়ের বিরুদ্ধে ঠাকুরসাব নিয়েছিলেন। লোহা দিয়ে লোহা কাটতে হবে। ধর্ম দিয়েই ধর্মের ভূত ভাগাতে হবে।

unity

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি এবং আবুল বাশারের মতো পণ্ডিত এবং উদার ব্যক্তিদের মাথায় রেখে একটি কমিটি গঠন করা হোক। এই কমিটি একশো নম্বরের প্রশ্নপত্র তৈরি করবে। আলাদা আলাদা ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা প্রশ্নপত্র। যে ধর্মের মিছিল থেকে প্ররোচনা ছড়ানো হবে, তাদের মিছিল পুলিশ আটকাবে। কিন্তু লাঠি–‌গুলি কিছুই চালাবে না। কাউকে গ্রেপ্তারও করবে না। সবার হাতে হাতে প্রশ্নপত্র এবং কাগজ কলম ধরিয়ে দেওয়া হবে। বলা হবে, এক ঘণ্টার মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

প্রশ্নগুলো খুবই সহজ সরল হবে। যেমন ধরুন, রামের ভগ্নিপতির নাম কী?‌ ভরতের শ্যালিকা কে?‌ রাম কোন ব্রাহ্মণকে হত্যা করেছিলেন?‌ মহাভারত কে লিখেছিল?‌ বাল্মীকি রামায়ণের কোন কান্ডে অকাল বোধনের বর্ণনা আছে। সুভদ্রা অর্জুনের বউ না বোন?‌ ইত্যাদি ইত্যাদি।

মুসলমান ধর্মের ক্ষেত্রে বেশি কিছু নয়। আরবি থেকে বাংলায় আর বাংলা থেকে আরবিতে অনুবাদ করতে দিলেই দেখবেন, ‘‌ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’‌ দশা হবে।

unity2

যারা পরীক্ষায় পাস করতে পারবে, তাদের সসম্মানে মুক্তি দেওয়া হবে। আর যারা পারবে না, তাদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় টানা সাতদিন গড়ের মাঠে সর্বসমক্ষে ঠা ঠা রোদে শাস্ত্রপাঠের আয়োজন। সাতদিন পর আবার পরীক্ষা। পাস করতে না পারলে আবার সাতদিন শাস্ত্রপাঠ।

কেউ নির্যাতনের অভিযোগ করতে পারবে না। আক্রান্ত হওয়ার ধুয়ো তুলতে পারবে না। কিন্তু কয়েকটি মিছিলে পরপর এমন দাওয়াই দিলেই দেখবেন ভিড় কমতে শুরু করেছে। কারণ, যারা ধর্ম নিয়ে মিছিল করে, তাদের অধিকাংশই ধর্মের কিছুই জানে না। শুধু মিছিলে কেন, ফেসবুকেও যারা ধর্মের নামে গলাবাজি করেন, বুকে হাত রেখে বলুন তো তাঁরা কজন সম্পূর্ণ রামায়ণ–‌মহাভারত পড়েছেন?‌ অথবা মহরমের পূর্ণ ইতিহাস জানেন?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.