জগবন্ধু চ্যাটার্জি
স্বাধীনতা ভাল। কিন্তু সেই স্বাধীনতার যখন লাগাতার অপব্যবহার হয়, তখন তা স্বেচ্ছাচার হয়ে দাঁড়ায়। যাঁদের উপর আইনরক্ষার দায়িত্ব, তাঁরাই যদি আইন ভাঙার খেলায় মেতে ওঠেন? যাঁদের উপর চরিত্র গঠনের দায়িত্ব, তাঁরাই যদি চরিত্রহীনতার রাস্তা দেখান, তখন সমাজের ভয়াবহ অবস্থা হয়।
কিছু কিছু শিক্ষক যে ধরনের আচরণ করে চলেছেন, তাঁদের শিক্ষক ভাবতে কষ্ট হয়। এস এস সি-র সুবাদে বা একে-তাকে ধরে চাকরি হয়ত পেয়ে গেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, শিক্ষক হওয়ার কোনও যোগ্যতাই তাঁদের নেই।
তাঁরা কেমন পড়ান, বা সেই বিষয়ের উপর তাঁদের কতখানি দখল, সেটা আলোচ্য বিষয় নয়। কিন্তু একজন শিক্ষকের আচরণটাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিজে যদি নিয়ম, শৃঙ্খলা বা শিষ্টাচার না মানেন, তাহলে ছাত্রদের শান্ত ও সংযত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাঁরাও সেই শিক্ষককেই অনুসরণ করবে। হয়ত শিক্ষককে ছাপিয়ো যাবে। তখন তাকে আর শাসন করাও যাবে না। পরিস্থিতি আয়ত্বের বাইরে চলে যাবে।
সেটাই হয়েছে এই মোবাইলকে ঘিরে। মোবাইল একটি প্রয়োজনীয় বস্তু। আধুনিক সমাজে মোবাইল ছাড়া অনেকে হয়ত কল্পনাও করতে পারেন না। কিন্তু এতটা প্রয়োজনীয়ও নয় যে সবসময় মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে হবে। আমিও মোবাইল ব্যবহার করি। তবে ইচ্ছে করেই স্মার্ট ফোন কিনিনি। চাইলে হয়ত কিনতে পারতাম। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, কথা বলার জন্য সাধারণ মোবাইলই যথেষ্ট।
কিন্তু অনেককে দেখি, সারাক্ষণ তাঁরা মোবাইলেই মগ্ন। কমনরুমে যতক্ষণ থাকে, মোবাইল নিয়েই মেতে থাকে। ক্লাসে যাওয়ার দেরি হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে হুশ নেই। অনেকে শুনেছি, ক্লাসের মাঝেও মেসেজ করে। এত কীসের জরুরি কথা? অনেকেই বিবাহিত। বাড়িতে স্ত্রী আছে। হাবভাব দেখেই বুঝতে পারি, স্ত্রীর সঙ্গে কথা বা মেসেজ চালাচালি হচ্ছে না। হচ্ছে অন্য কারও সঙ্গে। সারাক্ষণ এই নিয়েই তারা মেতে আছে। তাহলে ছাত্রদের আর দোষ কী ?
এরা বাড়ি থেকে পড়াশোনা করেও আসে না। কোনও রকমে ক্লাসের সময়টুকু কাটিয়ে দেয়। স্কুল থেকে ফেরার পর কী করে, সহজেই বোঝা যায়। ব্যক্তিগত জীবনে কে কী করবে, সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু শিক্ষককে অনেক ব্যাপারে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে হয়। একজন ব্যাঙ্ক কর্মীকে বা ব্যবসায়ীকে যা মানায়, একজন শিক্ষককে তা মানায় না। অনেককে দেখেই মনে হয় ফোন ছাড়া দশ মিনিট থাকতে পারবে না। ভয়ঙ্কর অ্যাডিক্টেড হয়ে উঠেছে অনেকে। এদের দেখে রাগ করব না করুনা করব, সেটাই ভেবে পাই না।
কয়েকমাস আগে বর্ধমান জেলা স্কুল শিক্ষা সংসদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একজন শিক্ষক হিসেবে আমি তা সমর্থন করি। অনেকে হয়ত এর বিরোধীতা করবেন। হয়ত বলতে চাইবেন, এতে শিক্ষকদের অপমান করা হচ্ছে, শিক্ষকদের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কিন্তু এই জায়গায় শিক্ষকরাই নিজেদের এনে দাঁড় করিয়েছেন। আমরা ছাত্রদের কী শেখাব ? আগে আমাদের নিজেদের সংশোধন জরুরি। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে, অনুরোধ সারা রাজ্যে এই নিয়ম চালু করা হোক। শিক্ষকরাও মোবাইল আনা বন্ধ করুন। আনলেও স্কুল শুরুর আগে সেই মোবাইল হেডস্যারের কাছে জমা থাকুক। স্কুল ছুটি হলে ফেরত দেওয়া হোক। যদি কারও একান্তই জরুরি ফোন আসে, তাহলে স্কুলের ল্যান্ড লাইনে আসুক।
শুধু প্রাইমারি স্কুল নয়, হাইস্কুলেও এই নিয়ম চালু হোক।
(এই বিষয় নিয়ে সুস্থ বিতর্ক হতেই পারে। আপনিও আপনার মতামত লিখে পাঠান বেঙ্গল টাইমসে। মনোনীত হলে অবশ্যই ছাপা হবে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)