সোম্যদীপ ব্যানার্জি
সালটা ২০১২-১৩। একটি বাম ছাত্র সংগঠন (এস এফ আই ) বাংলাদেশের শাহবাগ আন্দোলের সহমর্মিতা জানানোর জন্য কলকাতার রানু ছায়া মঞ্চে একটি অনুষ্ঠান করেছিল। সেই সময় সেই সংগঠন এর কর্মীদের ফেসবুক ওয়াল দেখলেই প্রত্যক্ষ করা যেত কিছু স্লোগান, যেমন ‘রাজাকারের চামড়া তুলে নেবো আমরা’ অথবা ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার।’ ‘পদ্মা, মেঘনা, যমুনা/ তোমার আমার ঠিকানা’। এককথায় কলকাতার রাজপথ থেকে ঢাকার প্রজন্ম চত্বর মিলে মিশে একাকার । সেই সময় যখন শাহবাগ আন্দোলন চলছে তখন তদানীন্তন সরকার মানে তৃণমূল সরকার এই নিয়ে কোনও মন্তব্য রাখেনি। তার কারণ খুবই স্পষ্ট। সেটা হল মুসলিম ভোট আর সিমির সঙ্গে নিবিঢ় যোগাযোগ। সেই সময় এমনকী দিলীপ ঘোষের বানর সেনারাও লাফালাফি করেনি। তার কারণ ওটা বাংলাদেশ। একমাত্র কমিউনিস্টরাই এই আন্দোলনকে সমর্থন করে রাজাকার ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়।
কিন্তু মানুষ ভুলে যায় এই ঘটনাগুলো। এই কমিউনিস্টদের শুনতে হয় যে তারা অন্যরকমভাবে মুসলিম তোষণ করছে। বাংলাদেশের ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার পর একমাত্র এদেশের কমিউনিস্টরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল, রাস্তায় নেমেছিল। সেখানে ঘাসফুল বাহিনীও আসেনি এবং চাড্ডীরা সে কথা জানেই না। ১৯৯২ তে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়। পশ্চিমবঙ্গ একটি প্রদেশ যেখানে কোনো রক্তপাত হয়নি ; সম্ভব হয়েছে তার কারণ পশ্চিমবঙ্গের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ এবং তদকালীন বামফ্রন্ট সরকার থাকার জন্য। ২০০২ এ গোধরার আঁচ লাগেনি এই বঙ্গের মাটিতে। এমনকী ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পর সারা দেশে তৎকালীন কংগ্রেসের নেতৃত্বে যে শিখ নিধন যজ্ঞ শুরু হয় তার কোনও কিছুই আঁচ পড়েনি এই বঙ্গে। আর আজকে দেখছি একদিকে যেমন রাজ্য সরকারের মুসলিম মৌলবাদ তোষণ, অন্যদিকে প্রত্যেক দিন বাড়ছে আর. এস. এস এর শাখা। যার ফলে এই বঙ্গে ঘটছে একটি সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ রাজনীতি। এই রাজনীতিকে স্তব্ধ করতে পারে একমাত্র এই বঙ্গের মানুষ। এই বঙ্গের মানুষকে বুঝতে হবে রামমোহন, মধুসূদন, বিদ্যাসাগর, নজরুল এবং সর্বোপরি আলোকিত জ্যোতির্ময়ের মাটিতে যেমন সিদ্দিকুল্লাদের স্থান নেই ঠিক তেমনি মোহন ভাগবতের বানর সেনাদেরও জায়গা নেই। আর তাই আজকের লড়াই খুবই তীব্র । এই লড়াই চলুক সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে। এই লড়াই যেন বলে ওঠে “বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন–এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।” আর চিহ্নিত করতে পারে আসল ধর্মীয় দাঙ্গাকারীদেরকে ।