সব্যসাচী কুণ্ডু
ছিঃ ছিঃ ছিঃ কী দিনকাল এল কমরেড! এত বড় ভোটের ময়দানে কোথাও খুঁজেই পাওয়া গেল না। একটি পোস্ট ছড়িয়ে গেল, ১৪০ আসনে প্রার্থী দিয়ে সিপিএম পেয়েছে ৩১৬ ভোট। না, এত কম নয়। কারণ, বেশ কিছু কেন্দ্র ধরে ধরে হিসেব করে দেখলাম, কোথাও ৫০০ বা ৬০০–র বেশিও চোখে পড়ল। তবে গড়পড়তা ওই ৫০০–৬০০। কিন্তু গোটা রাজ্যে মোট ভোট বা শতাংশ কত? ইলেকশন কমিশনের সাইট ঘেঁটে সিপিএমের নামটাই খুঁজে পাওয়া গেল না। সিপিআই তবু ০.২ শতাংশ পেয়েছে। প্রথম ষোল দলের তালিকায় তবু তাদের নাম আছে। সিপিএম অনেক পেছনে। এই ফল করে আবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মোদির মুণ্ডপাত করা হচ্ছে। আর বলছে দেশে খুব দুর্দিন আসছে। বলি আপনাদের দুর্দিনের কথা কি একবারও ভেবে দেখেছেন?
সব কেন্দ্র মিলে ভোট কত হবে? সংখ্যাটা বোধ হয় লাখের নিচেই হবে। একটা জাতীয় দলের এমন করুণ দশা কেন হবে? কেন আপনাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? বহির্বিশ্বকে বোঝাতে হবে না, আগে নিজের ঘরে বোঝান। অবশ্য, আপনারা কম বোঝেন, এমন তো বলতে পারি না। হয়ত একটু বেশিই বোঝেন। এতটাই বেশি বোঝেন, যখন বলতে শুরু করেন, লোকের মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।
আপনাদের যা মতি গতি, আজ না হয় কাল তো এটা হওয়ারই ছিল। বলি কলেজে কলেজে ছেলে ছোকরাদের মাথা খেয়ে আর আজাদি আজাদি করে চিল্লা চিল্লি করে কি ভোট পাওয়া যায়? ভোট পেতে গেলে আগে মানুষের মন জয় করুন। জয় করতে না পারুন, অন্তত মনের কাছাকাছি থাকুন। আপনাদের ওই বস্তাপচা রীতি– নীতি, আজাদি গ্যাং আর ওই বুদ্ধিজীবীদের জ্বালায় মানুষ তিতিবিরক্ত, ভোট দেবে কী করে? কাজ কর্ম তো কিছু নেই, খালি ফেসবুক আর টুইটার আর সংসদে গিয়ে লোকের কাজে কাঠি করা। এই সব করে দু একদিন কাগজে নাম উঠবে, এর বেশি কিছু হবে না।
আমাদের বাংলায় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে আপনাদের যে কি হাল হবে স্বয়ং আপনারাই জানেন। যা দিনকাল আসছে তাতে তো বছর খানেকের মধ্যেই ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টিটা ইতিহাস হয়ে যাবে। আর তার জন্য দায়ী হবে ওই বস্তাপচা নীতি আর কিছু পেছনপাকা কমরেড।
রাজনীতিটা আপনারা বেশ ভালোই বোঝেন, তাই ওই সব বিষয়ে আপনাদের জ্ঞান দিয়ে নিজের মূর্খতা জাহির করতে চাই না। তবে যদি এই অধমের কথা শোনেন তবে বলি, এখনও সময় আছে! দেশের মানুষের কাছে, দেশের যুব শক্তির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান, প্রায়শ্চিত্ত করুন। যে সব দেশ বিরোধী কাজ কর্মে আপনাদের চ্যালারা যুক্ত আর আপনারা যেখানে ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছেন সেগুলি অবিলম্বে বন্ধ করুন। দেশের যুব শক্তিকে দিকভ্রান্ত না করে ওদের সঠিক পথ দেখান, দেশকে ভালবাসতে সেখান (অবশ্য, তার আগে নিজেরা দেশকে ভালবাসতে শিখুন। নইলে অন্যকে শেখাবেন কী করে?)। আজাদি গ্যাং, বুদ্ধিজীবী গ্যাং আর সেকুলার গ্যাং দের ছেঁটে ফেলুন। দলটাকে ঢেলে নতুন করে সাজান, নিচু তলার লোকদের কথা শুনুন, ওদের উপদেশ নিন। আপনারা ছাড়া বাকিরাও যে কিছু বোঝে, এটুকু আগে মনে মনে স্বীকার করতে শিখুন। দেখুন উপদেশ ফ্রিতেই পাওয়া যায়। নেবার নিন, না নেবার না নিন। তবে যা দিনকাল আসছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আবার আমাদের প্রশ্ন না করে, ‘কম্যুনিস্ট কারা, ভারতের রাজনীতিতে ওদের অবদান কী?’ আর আমরা, বর্তমান প্রজন্ম তখন এক বুক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলব, ‘কম্যুনিস্ট হল চীন থেকে আমদানি করা একধরনের চাইনিজ প্রোডাক্ট, যারা কিছু কাল আমাদের দেশে বিরাজমান ছিল। আমাদের পছন্দ হয়নি তাই আমারা ওদের ত্যাগ করেছি।’

