নাটক রিভিউঃ হিয়ার মাঝে
সজল মুখার্জি
নাটকের ভেতর আরেক নাটক। তার ভেতর উকি মারছে ইতিহাস। সেই ইতিহাস হয়ে উঠছে জীবন্ত। সবমিলিয়ে অন্য এক আবেদন নিয়ে হাজির হল ‘হিয়ার মাঝে’।
একেবারে নতুন নাটক নয়। বেশ কয়েকটি শো হয়েছে। উপচে পড়ছে, এমনও নয়। তবে যাঁরা দেখছেন, তাঁদের মনকে কোথাও একটা ছুঁয়ে যাচ্ছে। একদিকে রক্তকরবী, একদিকে সাজাহান, আবার মহড়ার নানা খুনসুটি- সবকিছু সুন্দরভাবে মিশে আছে।
একদিকে চলছে রক্তকরবীর মহড়া। রোজ এসে ‘উৎপাত’ করেন এক প্রবীণ মানুষ। তিনি নাটকে একটা পার্ট চান। পার্ট পাওয়া তো দূরের কথা, বদলে জুটতে থাকে উপেক্ষা আর অপমান। তবু তিনি আসেন, রোজ জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকেন।
বারবার উপেক্ষিত হয়েও তিনি রোজ কেন আসেন? জানা যায়, তিনি একসময়ের মঞ্চকাঁপানো অভিনেতা বিকাশ মুখার্জি। নাট্যমঞ্চে যাঁকে এনেছিলেন মহেন্দ্র চৌধুরি। তিনিই সেই সাজাহান! উঠে আসে ফেলে আসা সময়ের নানা রঙিন মুহূর্ত। শিহরন আনা সেই সন্ধ্যেগুলো কীভাবে হারিয়ে গেল, কেনই বা মঞ্চ থেকে অনেক দূরে সরে গেলন অতীতের সেই দিকপাল অভিনেতা, সেই যন্ত্রণার উপাখ্যান দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অসীম মুখার্জি। তিনিই এই নাটকের প্রাণপুরুষ। হাসির দৃশ্যে যেমন সাবলীল, তেমনই সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে যন্ত্রণাও।
নাটকটি লিখেছেন কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দেশনাও তাঁরই। প্রযোজনায় কলকাতা ক্রিয়েটিভ আর্ট পারফর্মার্স। অন্যান্য চরিত্রাভিনেতাদের মু্ন্সিয়ানাও তারিফ করার মতো। তবে রক্তকরবীর মহড়ার দৃশ্য যেন একটু বেশি। বেশ কয়েকটি নাচকেও কিছুটা অপ্রয়োজনীয় বলেই মনে হবে। এতে দর্শকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতেই পারে।
অনেক অভিনেতাকে কাজ দিতে হয়। ফলে, অনেক চরিত্র সৃষ্টি করতে হয়। আর চরিত্র সৃষ্টি করতে গেলে অহেতুক সংলাপ বা নৃত্য বা কোরিওগ্রাফি ঢুকে পড়ে। এ এক বাধ্যবাধকতা। কিন্তু দর্শকের তো তা বোঝার দায় নেই। তাঁর বিরক্তি আসছে কিনা, সেদিকটাও নাট্যকারকে নজর দিতে হয়। সেই দিকটায় বোধ হয় কিছুটা খামতি এসে গেছে। রবি ঠাকুর বোধ হয় একটু বেশিই গুরুত্ব পেয়ে গেছেন। একটু কম গুরুত্ব পেলে রবি ঠাকুর নিশ্চয় রাগ করতেন না।
(নাচকঃ হিয়ার মাঝে। নাট্যকার, নির্দেশকঃ কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রযোজনাঃ কলকাতা ক্রিয়েটিভ আর্ট পারফর্মার্স। মুখ্য অভিনেতাঃ অসীম মুখোপাধ্যায়)