সরস্বতী’র বরপুত্র

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদনঃ “সারাদিন মাঠে ঘাটে খেলে বেড়ালে পড়াশোনা শিকেয় উঠবে” – কোটেশনটা কোন বিখ্যাত ব্যক্তি’র নয় ঠিকই কিন্তু সবার পরিচিত। এটা আসলে আম বাঙালি’র বাণী। আমাদের বঙ্গজীবনের অঙ্গে কিছু ধারনা চিরকাল সেঁটে আছে, এটা তেমনই একটা মিথ। ধারনাটা একটু একটু বদলাচ্ছে,কিন্তু সেটাও আবার সীমিত ক্রিকেট নামক চৌম্বক ক্ষেত্রে। আপামোর বাঙালি’র বদ্ধ ধারনায় বিদ্যা আর ক্রীড়া’র অহি-নকুল সম্পর্ক। কিন্তু এই অদ্ভুত ধারনা যে কতটা ভুল তার অজস্র প্রমান আছে।বাগদেবী সরস্বতী’র কৃপাদৃষ্টি বারবার ছড়িয়ে পড়েছে ময়দানেও।

ব্রাজিলীয় বিশ্বকাপার ডাক্তার সক্রেটিসের কথা তো সবাই জানে। ফুটবল দেবতা’র পাশাপাশি বিদ্যা দেবীও যে সমান প্রশন্ন ছিলেন তাঁর উপর, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই উদাহরনে যারা ভাবেন “ওদের দেশে হয়, আমাদের হয় না”…। তাঁদের মনে করাই ডাক্তার টি আও’এর নাম।নাগাল্যন্ডের এই ফুটবলার যেমন ৪৮’র লন্ডন অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তেমনই ছিলেন একজন সফল ডাক্তারও। মা সরস্বতী’র আশীর্বাদ এই মাঠপ্রিয় খেলোয়াড়ের উপরেও ছিল যথেষ্ট।

এই বঙ্গভূমিতেও বহু ক্রীড়াবিদকে দুহাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন বিদ্যাদেবি। সেক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হয় ১৯১১’র অমর একাদশের অন্যতম সদস্য রেভারেন্ট সুধীর চ্যাটার্জি’র নাম। ইষ্ট ইয়র্কশায়ারকে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জয়ের জন্য তাঁর নাম অমর হয়ে থাকলেও সুধীর চ্যাটার্জি’র পান্ডিত্যের দিকও অনেকেরই জানা। পেশায় শিক্ষক সুধীর চ্যাটার্জি ইংল্যন্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতেও শিক্ষকতা করেছেন একসময়, নিজে হাতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিষ্ণুপুর শিক্ষাসদনের।

maaswaraswati

২০-৩০এর দশকের ফুটবলার সন্মথনাথ দত্ত একদিকে যেমন ছিলেন মোহনবাগানের অধিনায়ক তেমনই ছিলেন একজন সফল ডাক্তারও। দেশের অন্যতম নামী ক্লাবে খেলার জন্য তাঁকে পড়াশোনা’র সঙ্গে কনভাবেই আপোষ করতে হয়নি কখনও।

পরবর্তীকালেও কলকাতা ময়দানে এমন অনেক নাম উঠে আসে যারা সফল ফুটবলারের পাশাপাশি প্রথাগত শিক্ষা জীবনেও যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন।সুকুমার সমাজপতি, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, শান্ত মিত্র আরও অনেক নাম।শান্ত মিত্র ব্যাঙ্কের উচ্চপদে চাক্রী করেছেন দীর্ঘ্যদিন, এবং সেটা সম্পুর্ন মেধা’র জোড়ে। ৬০-৭০’র দশকে ভারতীয় দলের হয়ে খেলা ফুটবলার প্রদীপ দত্ত পরবর্তীকালে ইউবিআই’এর অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজারেরপদ অলংকৃত করেছেন।

ফুটবলের বাইরেও উচ্চশিক্ষিত ক্রীড়াবিদদের একাধিক উদাহরন পাওয়া যায়। জাতীয় দলের ক্রিকেটার অনিল কুম্বলে যেমন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার তেমন ভিভিএস লক্ষণ আবার ডাক্তারী পাশ করেছেন। তবে প্র্যাক্টিশ করার সুযোগ অবশ্য পান নি। ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছেন পেশা হিসাবে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বনাথন আনন্দও। পাঁচ বারের দাবা বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মেধা’র পরিচয় পাওয়ার জন্য অবশ্য দাবার বোর্ডই যথেষ্ট। ছোট থেকে শান্ত স্বভাবের আনন্দ পড়াশোনায় ভাল ছিলেন ছোট থেকেই। দাবার মত খেলায় অবশ্য মেহদাবী ছাত্র’র নাম বেছে বেছে নেওয়া কঠিন। বাংলার সূর্যশেখর গাঙ্গুলী, সন্দীপন চন্দ থেকে উঠতি দাবাড়ু সায়ন্তন দাস, দীপ্তায়ন ঘোষ, মিত্রাভ গুহ, খুশি ধারোয়া সবাইনিজের নিজের ক্লাসের অন্যতম সেরা ছাত্রছাত্রী।এখন কলকাতা ময়দানে এমন অনেক ফুটবয়ারি খেলেন যারা সাফল্যের সঙ্গে পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাচ্ছেন সমান ভাবে।

কাজেই যারা মনে করেন সরস্বতী’র বরপুত্র হতে গেলে খেলার মাঠ বর্জন সবার আগে দরকার তাঁদের ভুল ভাঙাতে আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে চারপাশে। আরে বাবা, “ বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে” দেবী যে “চরাচর সারে”ও। তিনি যে ক্লাসরুমের পাশাপাশি খেলার  মাঠেও সমান ভাবে বিরাজমান।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.