জানতেন, হারলেই সব আক্রমণ ধেয়ে আসবে তাঁর দিকে। তাঁকেই খলনায়ক বানানোর জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। তার পরেও শেষ শট নিতে এলেন জুয়েল রাজা। সত্যিই বুকের পাটা আছে। তিনি জুয়েল, তিনিই রাজা। লিখেছেন সুমিত চক্রবর্তী।।
আচ্ছা, জুয়েল রাজা কোন ক্লাবে খেলেন ? ঘটনা হল, তাঁর কোনও ক্লাব নেই। জাতীয় দলে অনেকদিন দাপটের সঙ্গে খেলছেন। আই এস এলেও বেশ সফল। কিন্তু ক্লাব ফুটবলে যেন ব্রাত্যই থেকে গেছেন। না মোহনবাগান, না ইস্টবেঙ্গল— কোনও ক্লাবই তাঁকে দলে রাখেনি। আই লিগ খেলা অন্য ক্লাবগুলিও আগ্রহ দেখায়নি এই ফুটবলারকে ঘিরে।
কী জানি, আই এস এল ফাইনালের পর হয়ত কেউ কেউ আগ্রহ দেখাবেন। হয়ত রাতারাতি দর বেড়ে যাবে। হঠাৎ জুয়েলকে নিয়ে মাতামাতি কেন? গোটা টুর্নামেন্টে কেমন খেলেছেন, সেটা ম্লান হয়ে গেল। এমনকি ফাইনালেও কেমন খেলেছেন, সেটা নিয়ে আলোচনা নেই। যেহেতু তিনি শেষ পেনাল্টি শটটি নিয়েছেন, আর সেখান থেকে জয় এসেছে, অতএব, নাচানাচি শুরু।
পেনাল্টিতে গোল করা বিরাট কিছু বাহাদুরির ব্যাপার নয়। গোল হবে, সেটাই স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে জুয়েল রাজার গোলটাও স্বাভাবিক একটা গোল। তবু তাঁর কৃতিত্ব একটু হলেও বেশি। তিনি শেষ শটটা নিয়েছেন। তাঁকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমন নয়। নিজেই নাকি শেষ শটটা নিতে চেয়েছেন। বুকের পাটা আছে ছেলেটার । ধরে নিন যদি উল্টোটা হত! তিনি মিস করলেই টিম হেরে যাবে, এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হত! আর সেই মোক্ষম সময়ে তিনি পেনাল্টি মিস করলেন। তাহলে কী হত? তখন ‘সব ব্যাটাকে ছেড়ে এই ব্যাটাকেই ধর’ আওয়াজ শুরু হয়ে যেত। আজ যাঁরা নায়ক বানাচ্ছেন, তাঁরাই খলনায়ক বানিয়ে দিতেন। এই সত্যিটা কি জুয়েল রাজা জানতেন না ? দিব্যি জানতেন। জেনেশুনেও ঝুঁকি নিয়েছেন। খলনায়ক হতে পারেন, ফুটবল কেরিয়ারই হয়ত প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে, এগুলো জানার পরেও শেষ শটটা নিতে চেয়েছেন। এই সাহসিকতা কজন দেখাতে পারতেন ?
সত্যিই তিনি জুয়েল, সত্যিই তিনি রাজা।