লোন ?‌ সাবধান, ফাঁদে পা দেবেন না

রাজেশ মুখার্জি

আপনার কাছে নিশ্চয় মাঝে মাঝে ফোন আসে। আপনার লোন চাই ?‌ একটা পলিসি করলেই আপনি তার দশ গুন টাকা লোন হিসেবে পেতে পারেন। অনেকেই সেই ফাঁদে পা দেন। একবার আমিও দিয়েছিলাম। রিলায়েন্স ক্যাপিটাল থেকে বলা হয়েছিল, লোন দেওয়া হবে। সত্যিই আমার সেইসময় টাকার খুব প্রয়োজন ছিল। দু লাখ টাকা লোনের জন্য কুড়ি হাজার টাকার পলিসি করতে হবে।
চেক কাটা হল রিলায়েন্সের নামে । তাই বিশ্বাস করেছিলাম, রিলায়েন্সের মতো কোম্পানির নামে যখন চেক কাটছি, তখন সেটা নিশ্চয় প্রতারণা হবে না। কয়েকদিন পর পলিসির কাগজ এল। তখন আরও বিশ্বাস হল। চেক নেওয়ার পর বলা হল, সরকারিভাবে আমরা পলিসি নিয়ে লোন দিই না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম হল, পলিসির বিনিময়ে লোন হয় না। তাই আমরা সরকারিভাবে তা দিতে পারি না। যদি ভেরিফিকেশনের জন্য ফোন আসে, আপিন বলবেন, লোন নিয়ে কথা হয়নি। ভেরিফিকেশন হয়ে যাক, তারপর আপনার লোন সাত দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। আমরা পলিসি আর লোনকে আলাদা করে দেখাবো।

reliance-capital
যেমন শেখানো হল, তেমনি বললাম। কাগজ হাতে এল। এরপর বলা হল, সেই পলিসির কাগজ জমা দিতে হবে। আসলটাই জমা দিতে হবে। তার আগে প্যান কার্ডের জেরক্স, ক্যান্সেল চেক জমা নেওয়া হয়েছিল। পলিসির অরিজিনাল কাগজ চাওয়া হল। তখন কেমন যেন সন্দেহ হল। এক বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করলাম। সে বলল, পলিসির কাগজ যেন কাউকে না দিই। পরের দিন থেকে বারবার ফোন আসতে লাগল। পলিসির কাগজ যেন দ্রুত জমা দিই। নইলে লোন হওয়া মুশকিল হবে। আমি বললাম, আপনাদের অফিসে গিয়ে দিয়ে আসব। বলা হল, আপনার আসার দরকার নেই, আমাদের লোক গিয়ে নিয়ে আসবে। তখন সন্দেহ আরও গাঢ় হল। আবার ফোন আসতে শুরু করল, কাগজ নেওয়ার তাড়া। আমি বললাম, আমি অফিস দেখে তবেই কাগজ দিতে পারি। কিন্তু তারা কিছুতেই অফিস দেখাবে না। তখন নিশ্চিত হয়ে গেলাম, এটা প্রতারণা চক্র। এক বন্ধু জানাল, ২১ দিন পর্যন্ত পলিসি বাতিল করা যায়। গেলাম রিলায়েন্সের শ্যামবাজারের অফিসে। সেখানে গিয়ে বুঝলাম, প্রতারণার জাল বহুদূর ছড়িয়ে আছে। আমার মতো অনেকেই এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আর রিলায়েন্স অফিস থেকে সবার সঙ্গে দুর্ব্যহার করা হচ্ছে। যারা অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন, যেন তারাই অপরাধী। কে আপনাকে লোন দেব বলেছে, আমরা জানি না। এই পলিসিটা কেন করবেন না ?‌ এটা বেশ ভাল পলিসি। এসব বোঝানো হতে লাগল। এবং সেটাও ধমক সহযোগে।

আমার প্রশ্ন আমার চেকটা যে এজেন্ট মারফত জমা পড়েছে, রিলায়েন্স তো চাইলেই তাকে খুঁজে বের করতে পারে। অর্থাৎ, কে আমাকে ঠকিয়েছে, তা খুঁজে বের করতে তাদের দু মিনিটও লাগার কথা নয়। রিলায়েন্সেরই তো উচিত তাদের নামে এফ আই আর করা। কিন্তু সেই ব্রাঞ্চের কোনও সদিচ্ছা দেখলাম না। পরিষ্কার বুঝতে পারলাম, এই প্রতারকদের মাথায় কাদের হাত রয়েছে। কোম্পানির মদতেই দিনের পর দিন এই কারবার চলছে। প্রলোভন দেখিয়ে পলিসি করানো হচ্ছে। আবার কারও কারও পলিসি ওই এজেন্টরাই বাতিল করে পুরো টাকা তুলে নিচ্ছে।

প্রতারকরা প্রতারণা করবে, সেটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু খোদ কোম্পানির লোক এভাবে এই প্রতারনাকে সমর্থন করে যাবেন, এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য লেগেছিল। আমার পলিসি নম্বর ও জেরক্স সঙ্গে পাঠালাম। আমার টাকা আমি তুলব, তিন দিন আমাকে ঘোরানো হয়েছিল। অহেতুক হয়রান করা হয়েছিল। এমনকি ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে দিয়ে লিখিয়ে আনতে হয়েছিল, আমিই সেই ব্যক্তি। রিলায়েন্স ক্যাপিটালের এই প্রতারনা হয়ত অনেকের সঙ্গেই হয়েছে। তাই চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করলাম। বেঙ্গল টাইমস কর্তৃপক্ষ আশা করি লেখাটি ছাপবেন। অসংখ্য মানুষ রোজ প্রতারিত হচ্ছেন। যদি একজনকেও সচেতন করতে পারি, তাহলেই খুশি হব। রিলায়েন্স কর্তাদের মদত ছাড়া কোনওদিন এই প্রতারনা হত না। এই ব্যাপারে অন্তত আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই। তাই এই লেখার মাধ্যমে রিলায়েন্সের সেই কর্তাদেরও ধিক্কার জানাই।

(‌লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। মতামতের দায় একান্তই লেখকের। তবে তাঁর পলিসি পেপারের জেরক্স তিনি পাঠিয়েছেন। সেটা যে আসল, তা রিলায়েন্স কাস্টমার কেয়ার থেকে ভেরিফাই করা হয়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে অভিযোগটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। নেট থেকে সার্চ করে দেখা গেছে, আরও অনেকেই এই অভিজ্ঞতার শিকার। তাই রাজেশবাবুর অভিজ্ঞতাটি সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন করা হল। আপনার যদি এমন কোনও অভিজ্ঞতা থাকে, আপনিও লিখে জানাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com )

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.