সায়ন বিশ্বাস
কয়েকদিন আগে একটি কাজে রাঁচি গিয়েছিলাম। এক বেলার কাজ। দিনে গিয়ে রাতেই ফিরে আসা। কোথায় হোটেল খুঁজব ? একজন সন্ধান দিলেন, স্টেশন চত্ত্বরেই রয়েছে রিটায়ারিং রুম। সেখানেই থাকা যায়।
রিটায়ারিং রুম নিয়ে এর আগে খারাপ অভিজ্ঞতাও আছে। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। গেলাম সেই রিটায়ারিং রুম বুক করতে। বলা হল, খালিই আছে। নিচে কাউন্টার থেকে বুকিং করে আসুন। কাউন্টারে গেলাম। টিকিট আর পরিচয়পত্র দেখাতে বললেন। টিকিট দেখিয়ে, ভোটার কার্ড দেখিয়ে, টাকা জমা করলাম, ভদ্রমহিলা স্লিপ দিলেন। কোথাও অহেতুক হয়রান করার কোনও ব্যাপার নেই। দশ মিনিটের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়াটা হয়ে গেল। মাত্র আড়াইশো টাকার বিনিময়ে এসি সিঙ্গল রুম। বেশ ছিমছাম, গোছালো। পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা যাবে না। সবমিলিয়ে চমৎকার অভিজ্ঞতা।
উল্টোটা হয়েছিল বাংলায়। দিঘায় একবার এই রিটায়ারিং রুম বুকিং করতে গিয়েছিলাম। বুঝলাম, কেউ দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। এ ঠেলছে ওর কাছে, ও বলছে স্টেশন ম্যানেজারের কাছে যান। তাঁর রুম দীর্ঘ সময় ধরে তালা বন্ধ। আধঘণ্টা অপেক্ষার পর যদিও দেখা পাওয়া গেল, মেজাজ যেন সপ্তমে। মনে হল, রিটায়ারিং রুম বুক করতে এসে বিরাট অন্যায় করে ফেলেছি। ভাল ভাবে কথা বলার শিক্ষাটুকুও পাননি। বলা হল, এখানে বিরক্ত করবেন না। যা করার, অনলাইনে করুন। অনলাইনে বুকিং হয়, শুনেছি। কিন্তু যাঁরা স্মার্ট ফোন নেই, যাঁরা নেট ব্যবহারে ততটা সড়গড় নন, তাঁদের কি বুকিংয়ের কোনও উপায় নেই ? অনলাইন ছাড়া কি করা যায় না ? তখন তিনি রেগেমেগে বললেন, এত উত্তর দিতে পারব না। অনলাইনে করে আসুন। কোন সাইট থেকে করা যায়? উত্তর এল, আমি অতশত জানি না। যারা পাঠিয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করুন। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, অনলাইনে করা যায় ঠিকই, কিন্তু ফাঁকা থাকলে স্টেশন থেকেই করা যায়। কিন্তু সেই স্টেশন ম্যানেজারের যা হাবভাব, সেখানে আপনার থাকতে ইচ্ছেও করবে না।
আগের উদাহরণটা টেনে আনলাম দুটো ব্যবস্থার তফাত বোঝাতে। রাঁচিতে যেটা খুব সহজে হয়ে গেল, সেটা দিঘায় কেন হল না ? অহেতুক হয়রান করাটা বোধ হয় আমাদের মজ্জায় মিশে আছে। লোককে ফেরাতে পারলে কেউ কেউ বাড়তি আনন্দ পান। কই্, রাঁচিতে তো স্টেশন ম্যানেজারের কাছে পাঠানো হল না। কত সহজে কাজটা হয়ে গেল। তাঁরা চাইছেন, রিটায়ারিং রুমে যাত্রীরা এসে থাকুন। আর এখানে স্টেশন ম্যানেজার নিজে চাইছেন না কেউ সেখানে থাকুন।
ভারতীয় রেলের কাছেও একটা অনুযোগ। এত সুন্দর থাকার ব্যবস্থা। এটাকে আরও ভালভাবে বিজ্ঞাপন করা যায় না? মানছি, এতে ভিড় বাড়বে। বাড়ুক না, না হয় প্রয়োজন বুঝে আরও কিছু রুম বা ডরমেটারি বাড়ানো হোক। এতে যাত্রীদেরও সুরাহা হয়, রেলেরও আয় বাড়ে। রেলের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়। সেইসঙ্গে রিটায়ারিং রুম নিয়ে অহেতুক হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থাও থাকুক।
(এটি ওপেন ফোরামের লেখা। এই বিভাগটি পাঠকদের মুক্তমঞ্চ। আপনিও আপনার সমস্যার কথা, ভোগান্তির কথা, অভিজ্ঞতা বা পরামর্শের কথা তুলে ধরতে পারেন। সেই লেখাগুলি প্রতিকারের জন্য যথাস্থানে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এই সব লেখার লিঙ্কগুলি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে ই মেলের মাধ্যমে পাঠানো হবে। এতে আপনার সমস্যার কিছুটা সুরাহা হতেও পারে। লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com)