প্রথম প্রেমপত্র, অধ্যাপকের কাছ থেকে!

নিজের নাম গোপন রাখছি। স্যারের নাম গোপন রাখছি। কারণ জানাজানি হলে দুজনেরই বিড়ম্বনার সম্ভাবনা।
স্কুল জীবনে ভালো মেয়ে ছিলাম। শুধু পড়াশোনায় নয়, দেখতেও। আমাদের দেশে ভালো মেয়ে হওয়ার প্রধান ক্রাইটেরিয়া হল প্রেম না করা। যারা প্রেম করে তারা খুব খারাপ। আমিও সেটাই ভাবতাম। তাই প্রেম থেকে শত হস্ত দূরে থাকতাম। তার ওপর বাবা মা আমাকে ভর্তি করেছিল মেয়েদের স্কুলে। আর স্কুলটা বাড়ির একেবারে কাছে। এমনকি কোচিঙেও পড়তে যেতাম না, স্যারেরা বাড়িতে পড়াতে আসত। তাই যাওয়া আসার পথে ছেলেরা পিছনে ঘুরঘুর করবে, তা হত না।

teachers day3
কলেজে যখন ভর্তি হলাম, গার্লস কলেজে চান্স পাইনি, বাড়ির সবাই পইপই করে বলে দিল, প্রেম যেন না করি। কারণ কলেজের ছেলেরা সব দুশ্চরিত্র। বড়দের শিক্ষাগুনে আমিও ছেলেদের এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু কি কাণ্ড, প্রথম সপ্তাহেই প্রেমপত্র পেলাম, কোনও সহপাঠীর নয়, অবিবাহিত এক অধ্যাপকের।
এটাই আমার জীবনের প্রথম প্রেম পত্র। আর প্রথম আঘাতেই আমার মনের একটা বন্ধ দরজা হাট হয়ে খুলে গেল। সেকি টানাপড়েন! বাড়িতে কী বলবে? আবার ভাবলাম, কোনও সহপাঠী তো নয়, স্যার! স্যারের সঙ্গে প্রেম করলে নিশ্চয়ই বাড়িতে আপত্তি করবে না? কাপা কাপা হাতে চিঠির উত্তর দিলাম।
একমাস পরেই দ্বিতীয় প্রেমপত্র পেলাম। কী আশ্চর্য এবার একজন অধ্যাপকের। জীবনে যে একটা প্রেম করেনি তাঁর কপালেই দু দুজন অধ্যাপক! কেমন একটা ভয় হল, আমি কি তাহলে খারাপ মেয়ে? নইলে ওঁরা আমাকেই চিঠি দিচ্ছেন কেন? আরও ভয় হল, কোনও একজনকে হ্যাঁ বললে, অন্যজন যদি আমাকে ফেল করিয়ে দেন? যদি বাড়িতে বলে দেন? এই ভয়ে ভয়ে আমার কলেজ জীবন কেটে গেল, প্রেম করা হল না।
এর কয়েক বছর পর, আমি তখন বিবাহিত, আবার দেখা হল, সেই প্রথম প্রফেসরের সঙ্গে। কথা বলে বুঝলাম, তিনি আজ মনে করেন, আমি কয়েকদিন তাঁর সঙ্গে প্রেম প্রেম খেলা করেছিলাম। কি করে আপনাকে সত্যি কথাটা বলব স্যার! মুখে বলতে পারব না, তাই লিখেই জানালাম নয়। আমি জানি আমার ছদ্মনাম দেখলে আপনি ঠিক মানুষটিকে চিনে নিতে পারবেন।

তমসা চক্রবর্তী, প্রাক্তন ছাত্রী, মেদিনীপুর ডে কলেজ

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.