স্মৃতিটুকু থাক
বেঙ্গল টাইমসে উত্তম কুমার সম্পর্কে অনেক লেখা পড়লাম। স্মৃতিটুকু থাক বিভাগটাও বেশ জনপ্রিয়। নিজের পুরানো দিনের কিছু কথা মনে পড়ে গেল।
আমাদের বাড়িতে তখন টিভি ছিল না। আশেপাশের কয়েকটা বাড়িতেই টিভি দেখতে যেতে হত। তখন শনিবার বাংলা ছবি, রবিবার হিন্দি ছবি। জুলাই মাসের চারটি সপ্তাহেই দেওয়া হত উত্তম কুমারের ছবি। রবিবারের হিন্দি ছবিকে ঘিরে তেমন উৎসাহ ছিল না। কিন্তু শনিবারটা মিস করতাম না।
তেমনই এক শনিবারে শাপমোচন ছবিটা দেখতে গেছি। যাদের বাড়িতে গেছি (নামটা লিখলাম না, কেউ কেউ অস্বস্তিতে পড়তে পারেন), তাদের বাড়িতে আমার মতোই আরও কয়েকজন গিয়েছিল। পাড়ার এক কাকু, তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে কিছু লোকজনও এসেছিলেন। সিনেমা চলছে। মাঝে লোডশেডিং। কখন আসবে, কোনও ঠিক নেই। হঠাৎ এক বন্ধু বলে উঠল, ভোম্বল( আমার ডাক নাম), একটা গান হয়ে যাক। কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেলাম।
যে আত্মীয়রা এসেছিলেন, তাঁরাও গানের আবদার করলেন। কী গান করা যায় ? একজন বললেন, এই শাপমোচনে হেমন্তর কোনও গান গাইতে পারিস। গাইলাম, ঝড় উঠেছে, বাউল বাতাস, আজকে হল সাথী।
সেই কাকুর শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি মেয়েও এসেছিল। আমারই সমবয়সী। সে আঁড়চোখে তাকাল। বুঝলাম, তার বেশ ভালই লেগেছে। আরও কয়েকটি গানের আবদার এল। গাইলাম। মেয়েটিও দুটো গান গাইল।
কিন্তু তারপর আর দেখা নেই। পরের শনিবার আবার গেলাম। তারা চলে গেছে। তার বেশ কয়েকবছর পর ওই বাড়িতেই একটি বিয়ে বাড়ি। সেই মেয়েটি আবার এসেছিল। দেখা হল, সে নিজে থেকেই বলল, সেবার আপনার গান শুনে খুব ভাল লেগেছিল। এখন গান গাইছেন না? টুকটাক আরও অনেক কথা। তখনও মোবাইল তো দূরের কথা, ল্যান্ডফোনও আসেনি। তাই নম্বর দেওয়া-নেওয়া হয়নি। তবে সেই প্রথম একটি মেয়েকে ভাল লেগেছিল।
আর কখনও দেখা হয়নি। তবে প্রথম দেখার সঙ্গে কোথাও একটা উত্তম কুমার জড়িয়ে আছেন।
রাজেশ মাইতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
(স্মৃতিটুকু থাক। পাঠকের মুক্তমঞ্চ। আপনিও আপনার জীবনের নানা অনুভূতির কথা লিখে জানাতে পারেন। ই মেলে পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসের ঠিকানায়। ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com)