পর্যটনে রাজ্য কেন পিছিয়ে, কিছুটা বোঝা গেল

প্রদীপ্ত বিশ্বাস

সরকারি অফিস সম্পর্কে নানা কথা শোনা যায়। সবটা হয়তো সত্যি নয়। হয়ত কিছুটা অতিরঞ্জিত। কিন্তু সবটা যে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়, সেটাও বুঝতে পারলাম। আমার একটি ছোট্ট অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছি।
মার্চে একবার পাহাড় যাওয়ার ইচ্ছে আছে। অফিস থেকে ছুটি নেওয়া হয়েছে। ট্রেনে আসা–‌যাওয়ার টিকিট কাটাও হয়ে গেছে। বাকি শুধু হোটেল বুকিং। খোঁজখবর নিয়ে ঠিক করলাম, রিশপ আর লোলেগাঁও যাব। লোলেগাঁও–‌এ বন উন্নয়ন নিগমের (‌ডব্লু বি এফ ডি সি)‌ কটেজেই থাকব। নেট খুলে দেখলাম, ঘর পাওয়া যাবে। মনে হল, সল্টলেকের হেড অফিস থেকে বুকিং করব। কিন্তু তা তো শনি ও রবিবার বন্ধ। বাধ্য হয়ে অফিস থেকে হাফ সিএল নিয়ে গেলাম সল্টলেকের অফিসে। গিয়ে মোটেই ভাল অভিজ্ঞতা হল না।
কর্মীদের আচরণ দেখে মনে হল, পর্যটকরা সেখানে যাক, তাঁরা চান না। কোনও বুকিং না দিতে পারলেই যেন ভাল হয়। নিচে বলা হল চার তলায় যেতে। চারতলায় গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তাঁদের দিক থেকে কোনও আগ্রহই দেখা গেল না। মনে হল, বুকিং করতে গিয়ে বোধ হয় তাঁদের খুব বিরক্ত করে ফেললাম। লোলেগাঁওয়ে কটেজ আছে কিনা, সেটাই তাঁরা নিশ্চিত নন। হতেই পারে, সবাই সবটা জানে না। কিন্তু যিনি বুকিংয়ের দায়িত্বে, তিনি তো জানবেন। একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন। বলা হল, আজ হবে না। কারণটা কী?‌ ‘‌যিনি বুকিং করেন, তিনি আসছেন না।’‌

wbfdc.net
এটা তো সরকারি অফিস। তিনি নাই আসতে পারেন, তাই বলে বুকিং হবে না। অন্য কেউ নেই?‌ কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই। একজন বললেন, সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে চলে যান। ওখান থেকে হতে পারে।
কিন্তু এটাই তো হেড অফিস। এখান থেকেই তো হওয়ার কথা। তাছাড়া, ওয়েলিংটন স্কোয়ারে যখন পৌঁছব, তখন তো অফিস বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বলা হল, ‘‌অন্যদিন আসুন।’ বিনীতভাবেই বললাম, ‘‌অফিস থেকে হাফ ছুটি নিয়ে আসছি। রোজ রোজ তো আসা সম্ভব নয়। আজ হলে ভাল হত।’ ডাক পড়ল একজনের। কমবয়সী (‌আনুমানিক তিরিশ–‌বত্রিশ বছর বয়স)‌ একজন এলেন। তিনি বললেন, ‘‌যে বুকিং করে, সে নেই। তার কাছে পাসওয়ার্ড আছে।’ তারপরেই তার পরামর্শ, ‘‌এখানে আসার দরকার কী?‌ অনলাইনে করে নিন। সবাই তো তাই করে।’‌ ‌ ‌ ‌
বলতে ইচ্ছে হল, ‘‌তাহলে আপনাদের কাজটা কী?‌ রেলের টিকিটও তো অনলাইনে পাওয়া যায়। তাই বলে কাউন্টার তো উঠে যায়নি।’‌ কিন্তু ঝগড়া করার ইচ্ছে হল না। এই হল সরকারি পরিষেবা। রাজ্যের পর্যটনে ডব্লু বি এফ ডি সি–‌র একটা ভূমিকা আছে। বিভিন্ন জায়গায় বেশ ভাল ভাল কিছু কটেজ বানানো হয়েছে (‌দাম একটু বেশি, তবুও অন্যগুলোর তুলনায় ভাল)‌। কিন্তু তা বুকিং করতে গিয়ে যদি এমন হয়রানির মুখে পড়তে হয়, তা সত্যিই মর্মান্তিক। এই যদি সরকারি কর্মীদের মনোভাব হয়, তা খুব দুঃখজনক। সেই কর্মীদের নামও জানি না। তাঁদের কারও সঙ্গে কোনও পূর্ব শত্রুতাও নেই। তবু যে অভিজ্ঞতা হল, বেঙ্গল টাইমসের মাধ্যমে তা তুলে ধরলাম। হয়ত আমার মতো আরও অনেকের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। হয়ত বিক্ষিপ্ত ঘটনা। কিন্তু আমাদের রাজ্যের পর্যটন কেন পিছিয়ে পড়ছে, এই বিক্ষিপ্ত ঘটনাটা তার একটা সু্ন্দর ছবি তুলে ধরল। জানি না, সরকারি কর্তাদের নজরে এই লেখা পড়বে কিনা। বা পড়লেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার কাজ জানানো, জানিয়ে রাখলাম।

(‌কোনও সরকারি দপ্তরে গিয়ে ঠিকঠাক পরিষেবা পাননি?‌ কর্মীদের আচরণ খারাপ লেগেছে?‌ সেই অভিজ্ঞতা লিখে জানান বেঙ্গল টাইমসে। উপযুক্ত গুরুত্ব দিয়ে তা তুলে ধরা হবে। ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com) ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.