নাস্তিক বন্ধুদের খোলা চিঠি

সব্যসাচী কুণ্ডু
প্রিয় নাস্তিক বন্ধুরা,
পত্রের প্রথমে জানাই আমার আন্তরিক ভালবাসা।আমি কোনও ধার্মিক মহাপুরুষ নই। আমি একজন সাধারণ ছা পোষা বাঙালি। আমার ধর্ম, আমি হিন্দু।এই জন্য আমি গর্বিত। প্রতিদিন অফিস যাবার আগে স্নান করে পুজো করি। এটা আমার রোজনামচা। প্রতিদিন যেমন দাঁত মাজি, স্নান করি, খাবার খাই, কাজ করি তেমনি পুজোও করি। তবে এটা ভাববেন না যে কিছু পাবার আশায় করি। পুজো করলে মনের জোর বাড়ে, নিজেকে কখনও একা একা মনে হয় না। ভাবি সাথে ভগবান আছেন, সব ভালো হবে।
কিন্তু বন্ধু, আপনাদের রকম সকমগুলো ঠিক বোধগম্য হয় না। আপনারা বলেন , “ আমি নাস্তিক আমি সেকুলার” , সেটা আবার জোর গলায় প্রচারও করেন। ভালো, আলবাত ভালো। আপনারা ভগবান মানেন না , মূর্তি পুজোয় বিশ্বাস করেন না। সেটা নিয়ে তো কেউ আপত্তিও করছে না। আমরা স্বাধীন দেশে বাস করি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে। কিন্তু কোনও ধর্মকে আঘাত করার বা বদনাম করার স্বাধীনতা বা অধিকার কি আছে?

mahabharat2
আমি মানছি কিছু ভণ্ড লোক বা ধর্মের ঠিকাদারদের জন্য কিছু বিশেষ ধর্মকে নিয়ে সমালোচনা করা হয়। এই জন্মে এই এই করবি তো পরের জন্মে এই এই হবি। বা ভগবানকে ১০০১ টাকা দক্ষিণা দে, তাহলে তোর সব মনোবাসনা পূর্ণ হবে । কাল রেজাল্ট বেরোবে বা অফিসে ইনক্রিমেন্ট হবে। ভগবান, একটু দেখো, জোড়া পাঁঠা দেবো। এগুলো ভণ্ডামি বা অজ্ঞানতা বলে। তবে কিছু অসৎ, ভণ্ড লোকের জন্য পুরো ধর্মটাই খারাপ, এটাও বড় বেশি সরলীকরণ। পিকে সিনেমার সেই দৃশ্যটা মনে পড়ে, যেখানে পিকে বলছে, ভগবান দুই প্রকার, একজন যিনি এই সংসারের এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের রচনা করেছেন আর একজন যাকে আমরা তৈরি করেছি। দ্বিতীয় ভগবানের পেছনে কিছু লোক দিন রাত ছুটছে কিছু পাবার লোভে। আর কিছু মানুষ ভগবানের একটা রূপকে পুজো করছেন সন্তানের মঙ্গল কামনায়, দেশের মঙ্গল কামনায়। এটা দেখে কিছু মানুষ সমালোচনা করছে হাসা হাসি করে । কিন্তু ধর্মীয় ভণ্ডামিকে রুখতে তো ভগবানের দূত হয়ে বারবার অনেক মহাপুরুষ এসেছেন এই দেশে। আমাদের চোখ খোলার জন্য আমাদের সঠিক রাস্তা দেখানোর জন্য । কখনও গৌতম বুদ্ধ রূপে, কখনো মহাবীর রূপে, কখনও চৈতন্য রূপে, আবার কখনও শ্রী রামকৃষ্ণ রূপে। আবার হয়ত কেউ আসবেন। কিন্তু এই সবের জন্য হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করা কি ঠিক ? মনে রাখবেন, আমাদের দেশেই লেখা হয়েছে রামায়ণ-মহাভারত। হাজার হাজার বছরের পরম্পরা। এক কথায় তা উড়িয়ে দেওয়াটাও অতীতকে অস্বীকার করা। সভ্যতার এত অগ্রগতি হয়েছে, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা তো সারা বিশ্বজুড়ে। সাহিত্যও নিশ্চয় এগিয়েছে। আরেকটা মহাভারত লেখা হল না কেন ? তখনকার যুগে যদি নোবেল থাকত, একসঙ্গে কটা নোবেল পেতে পারত আমাদের মহাভারত ? এমন এক মহান সৃষ্টি, পুরো আজগুবি বিষয়ের উপর দাঁড়িয়ে, এটা বিশ্বাসযোগ্য ?

mahabharat3
কোনওকিছু সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে তার পটভূমি জানাটা খুব জরুরি। কুসংস্কার বিরোধী এক সেমিনারে জনৈক ইউ আর অনন্ত-মূর্তি মহাশয় বলেছিলেন যে কোনও ভগবানের মূর্তিতে প্রস্রাব করা ঠিক। আর তাঁকে সমর্থন করেছিলেন কাল-বর্গি মহাশয় । আমি হিন্দু হয়ে বলছি, আমি এই মতকে সমর্থন করি না। আবার এই কারণে কাল-বর্গির মতো লেখককে হত্যা করাকেও আমি সমর্থন করি না । আমিও সোচ্চারভাবে বলছি, এই হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা হোক। চূড়ান্ত শাস্তি হোক। ধর্ম সহিষ্ণুতার কথা বলে। যাদের সেই সহিষ্ণুতা নেই, তাদের জন্য ধর্ম কলঙ্কিত হোক, আমার মতো অনেকেই এটা চান না। আমাদের হিন্দু ধর্ম আদি সনাতন ধর্ম আমাদের বেদ উপনিষদ গীতা কোথাও ভণ্ডামি নেই । আমরা ধর্ম কে মানি ,বিশ্বাস করি, পুজো করি। কিন্তু আমাদের ধর্মীয় ভাবাবেগ কেউ আঘাত করুক এটাও অনভিপ্রেত। বিরাট সংখ্যক মানুষের বিশ্বাসে একমত না হতেই পারেন, তাই বলে তাকে আঘাত করা কি খুব জরুরি ?
তাই আমার বিনীত নিবেদন, আসুন না সবাই মিলে এই অজ্ঞানতা দূর করি, শিক্ষার আলো প্রসারিত করি। কারও ধর্মীও ভাবাবেগে আঘাত না দিয়ে সমালোচনা বন্ধ রেখে আসুন না সবাই মিলে একটা সুন্দর দেশ গড়ার চেষ্টা করি। সবাই মিলে চেষ্টা করলে হয়ত অজ্ঞানতা কুসংস্কার দূর হয়ে যাবে । আজ ধর্মের নামে চারিদিকে আগুন জ্বলছে মানুষ খুন হচ্ছে তার জন্য যেমন ধর্মীয় ভণ্ডামি দায়ী তেমনি মিডিয়া আর তথাকথিত সেকুলাররাও সমান ভাবে দায়ী।

gita

পরিশেষে জানাই, ঈশ্বর মঙ্গলময় । আপনারা মানুন আর নাই মানুন উনি কিন্তু মা বাবার মতো তাঁর সব সন্তানের ভালো চান, মঙ্গল চান।আমরাও চাই, সবার মঙ্গল হোক, হ্যাঁ, নাস্তিকদেরও।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.