অভিরূপ কুমার
এবারের বইমেলায় বিক্রি নাকি অনেক কমে গিয়েছে। গিল্ডের হিসেব, অন্তত কুড়ি শতাংশ বিক্রি কমেছে। তথ্যটা মিথ্য নয়। বরং বিক্রির হার আরও কমলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। গিল্ডের পক্ষ থেকে আগ বাড়িয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হল, নোটবাতিলের জন্যই বিক্রি কমেছে। কাকে খুশি করতে এই বিবৃতি দেওয়া হল, কে জানে!
আমার অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথাই বলছে। নভেম্বরে নোট বাতিলের পর দৈনন্দিন জীবনে তার কিছু প্রভাব নিশ্চয় পড়েছিল। প্রকাশনা শিল্পেও পড়েছিল। এই কারণে অনেক বই হয়ত কম ছাপা হয়েছে। কিন্তু তার জন্য বিক্রি কমে গিয়েছে, এমনটা মানতে রাজি নই। প্রথমত, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। অধিকাংশ এটিএমেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে। খুচরো সমস্যার জন্য বই কিনতে পারেননি, এমন কোনও ক্রেতা ছিলেন বলে মনে হয় না। অনেক বড় বড় স্টলেই কার্ড সোয়াইপ করে কেনার ব্যবস্থা ছিল। বিভিন্ন স্টলে ঘুরে যেটুকু মনে হয়েছে, খুচরো কোনও সমস্যাই নয়। পাঠকদের বা দোকানিদের এই নিয়ে আক্ষেপ করতে তেমন শুনিনি।
মেনে নিলাম, খুচরো সমস্যায় জন্য বই বিক্রি কমেছে। একবার খাবারের স্টলগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখুন তো। সেখানে তো দিব্যি লাইন। এত এত দাম, তবু লাইনের শেষ নেই। একবার খোঁজ নিয়ে দেখুন। আলিবাবার বিক্রি নিশ্চিতভাবেই বেড়েছে। অর্থাৎ খুচরো সমস্যার যুক্তিটা একেবারেই ধোপে টিকছে না।
আসল কারণগুলো গিল্ডকর্তারা খতিয়ে দেখেছেন বলে মনেও হয় না। এই স্মার্টফোন নামক যন্ত্রটি হাতে হাতে এসে যাওয়ার পর পড়ার অভ্যেস ও ধৈর্য যে একেবারেই তলানিতে ঠেকেছে, এই সহজ ব্যাপারটা মানতে শিখুন। বইমেলায় যাঁরা ভিড় করছেন, তাঁদের অন্তত ষাটভাগ লোকের সঙ্গে বইয়ের কোনও সম্পর্কই নেই। সারা বছর তাঁরা একটিও বই পড়েন কিনা সন্দেহ। একটি আড়াইশো টাকার বই কেনার থেকে তাঁদের কাছে এক জিবি ডেটা কেনা অনেক বেশি জরুরি।
আরও একটা বড় কারণ এই খাবারের দোকানগুলো। নিঃশব্দে এঁরা যে বইমেলার কী ক্ষতি করছে, তা গিল্ড বুঝেও বুঝছে না। ধরা যাক, একজনের বাজেট হাজার টাকার। সে হাজার টাকা পকেটে নিয়ে বইমেলায় গেল। দেখা গেল, ফুড কোর্টেই চারশো থেকে পাঁচশো টাকা ফুরিয়ে গেল। বইয়ের জন্য বরাদ্দ অর্ধেক হয়ে গেল। অথচ, এত খাওয়ার আয়োজন যদি না থাকত, তাহলে হয়ত সাতশো বা আটশো টাকার কেনা হত। অর্থাৎ, খাবারের স্টলকে বড়লোক করতে গিয়ে প্রকাশকদের দুর্দশার মুখে ঠেলে দিচ্ছেন এই গিল্ড কর্তারা।
এরপরেও বলবেন গিল্ড প্রকাশকদের সংগঠন!