‘তরমুজ’ মুখার্জি সমীপেষু

রক্তিম মিত্র
ছোটবেলায় তরমুজ খেতে কার না ভাল লাগে! কিন্তু বাংলার যে প্রান্তে আমার বেড়ে ওঠা, সেখানে তরমুজের চাষ তখনও হত না, এখনও হয় না। এখন তবু বাজারে বিক্রি হয়, তখন তাও হত না। ফলে, তরমুজ নামক ফলটি যতই প্রিয় হোক, কালেভদ্রেই খাওয়া হত। কী জানি, সেই কারণেই হয়ত বেশি ভাল লাগত।
তখনও মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোইনি। খবরের কাগজ বলতে, তখনও শুধু খেলার পাতা। রাজনীতির খবর বলতে বড়জোর মাঝে মাঝে হেডলাইন। দেখলাম, আপনাকে বলা হচ্ছে তরমুজ। কয়েকদিন যেতে না যেতেই আপনার নামের সঙ্গে এই বিশেষণটা জড়িয়ে গেল। কেন যে আপনাকে তরমুজ বলা হত, কিছুই বুঝতাম না। তবে এটুকু মনে আছে, যিনি সবথেকে বেশি এই কথাটা বলতেন, তিনি আজ নবান্নের সর্বাধিনায়িকা। আপনারও সর্বময়ী নেত্রী।

subrata mukherjee
তিনি গত চারদিন ধরে দার্জিলিংয়ে। আগে তিনি পাহাড়ে গেলে তাঁর সঙ্গে থাকতেন এক সাংসদ। তিনি আজ প্রেসিডেন্সি জেলে। তারপর ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ির আরেকজন যেতেন, তাঁর কণ্ঠে এখন ব্রাত্যজনের রুদ্ধসঙ্গীত। তাই, আপনাকে দার্জিলিং না নিয়ে যাওয়ায় দুঃখ পাবেন না। একদিক দিয়ে বেঁচে গেছেন। কারণ, নেত্রীর খুব কাছাকাছি গেলে কী পরিণতি হতে পারে, এই দুজন হাড়ে হাড়ে বুঝছেন।
আপনার উপর দায়িত্ব পড়েছিল সাংবাদিক সম্মেলন করার। সত্যিই আপনি বর্ণময় এক চরিত্র। আপনার জায়গায় অন্য কেউ সাংবাদিক সম্মেলন করলে এই সাংবাদিক সম্মেলন এতখানি বর্ণময় হয়ে উঠত না। আপনি কী বললেন ? এক নজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।।
১) সেলিমের পকেটেও অনেকগুলো ইট ছিল।
২) বিমান কেমন নাটক করছে দেখলেন ? পাশের লোকের রক্ত নিজের মাথায় মেখে নিল।
৩) বিমানের মাথায় ওর দলের লোকেরাই ইট মেরেছে।
৪) সিপিএমের লোকেরা ব্যাগে করে ইট আর বোমা এনেছিল।
আরও নানারকম মনিমানিক্য ছিল। যা সাংবাদিক সম্মেলনকে আরও বর্ণময় করে তুলেছিল। আপনি রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, সরকারের পক্ষে বলবেন, পুলিশের পক্ষে বলবেন, বিরোধীদের কটাক্ষ করবেন, এই পর্যন্ত প্রত্যাশিত। কিন্তু কোথাও তো একটু হলেও বিশ্বাসযোগ্য থাকতে হয়। আষাঢ় পেরিয়ে গেলেও আষাঢ়ে গপ্পোগুলো থেকে যায়।
মহম্মদ সেলিমের পকেটে অনেকগুলো ইট ছিল ? কারও পকেটে এতগুলো ইট ধরে নাকি ? এমন কোনও জামা বা পাঞ্জাবির কথা আপনার জানা আছে বুঝি! সেলিম যথার্থই বলেছেন, তাঁর পকেটে কী আছে, আপনি জানলেন কীভাবে ? একটি বিশেষ প্রজাতির লোকেরা পকেটের খোঁজ রাখেন। সেলিম নাকি এবার থেকে পার্স সামলে রাখবেন।
এবার বিমানবাবু। তিনি নাটক করছেন ? মনে রাখবেন, সারাক্ষণ ক্যামেরার ফোকাসে ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান। ক্যামেরাতেই দেখা গেছে, তাঁর দিকে পুলিশের ইট উড়ে আসছে। লাঠি হাতে তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে পুলিশবাহিনী। পায়ে ইটের আঘাত লাগল। মাথায় লাঠির বাড়ি পড়ল। মাথা ফেটে গেল। বিমানবাবু বিপক্ষের রাজনীতিক হতে পারেন। তাই বলে মাথা ফেটে যাওয়ার পর এমন কটাক্ষ! বিমান বসুর নানা মন্তব্যের সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু মিথ্যে বলার ব্যাপারে বা নাটক করার ব্যাপারে আপনার বা আপনার নেত্রীর একশো মাইলের মধ্যেও আসবেন না।

biman basu
যে মানুষটার মাথা ফেটে রক্তাক্ত, তাঁর সম্পর্কে একটু শ্রদ্ধাশীল হয়ে কথা বলা যায় না ? আপনি বোধ হয় ভুলে গেছেন, একসময় আপনি এই শহরের মেয়র ছিলেন। এতদিন বলতেন, বিমানবাবুরা রাস্তায় নামেন না, শুধু ঠান্ডা ঘরে বসে বিবৃতি দেন। এবার তাহলে রাস্তায় দেখলেন। সেই পুলিশ লেলিয়ে দিতে হল! নির্বিচারে লাঠি চালাতে হল! পুলিশকে দিয়ে ইট ছোঁড়াতে হল! সামান্য ডেপুটেশনটুকুও নেওয়ার সৎ সাহস দেখানো গেল না!
সুব্রতবাবু, আপনি গণ আন্দোলনের নেতা। সাতের দশকে প্রিয়-সুব্রত জুটি বাংলাকে উত্তাল করে দিয়েছিল। সেই গণ আন্দোলনের অতীত আপনার সঙ্গে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা যেমন আছে, তেমনি সফল মেয়রের সুনামও আছে। নিজেকে বড্ড ছোট করে ফেললেন।
আপনার এই প্রেস কনফারেন্সের পরেও কেউ আপনার উপর রাগছেন না। এমনকি বামপন্থীরাও না। তাঁরা বলছেন, ‘ওঁর কথার কোনও গুরুত্বই নেই। নিজেকে কমেডিয়ানের স্তরে নামিয়ে এনেছেন।’ তৃণমূলিরাও বলছেন, ও তো একটা জোকার।

বিশ্বাস করুন, কলকাতার প্রাক্তন মেয়রকে জোকার ভাবতে আমাদের অন্তত ভাল লাগছে না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.