নন্দ ঘোষের কড়চা
মতি নন্দি বাংলা সাংবাদিকতার সাংঘাতিক ক্ষতি করে গেছেন। তিনি নিজে একইসঙ্গে ছিলেন ক্রীড়া সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক।
কোনি, ননীদা নট আউট, দলবদলের আগে, স্টপার–এসব দারুণ দারুণ বই তিনি লিখেছেন। কিন্তু তাঁর দেখা দেখি বাঙলার সব ক্রীড়া সাংবাদিক নিজেদের মতি নন্দি ভাবতে শুরু করেছেন। সকলেই সাহিত্যিক হতে চাইছেন। রূপক সাহা, রাতুল ঘোষ সবাই বই লিখতে শুরু করে দিয়েছেন।
তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন গৌতম ভট্টাচার্য। অন্যদের লেখা তবু পড়ে বোঝা যায়। গৌতম? ওরে বাবা। কাগজের সঙ্গে বিনামুল্যে মানে বই দিলে তবে সহজবোধ্য হয়। তাঁর তুলনা মতি নন্দি নন। বঙ্কিমচন্দ্র। বঙ্কিমের বাংলা বুঝতে যেমন মানে বই লাগে, গৌতমেরও তাই।
বাংলা ভাষা যে এত জটিল হতে পারে, তা তিনি না থাকলে বোঝা যেত না। মহাকাব্যে যেমন নানান রূপক ব্যবহার করা হয়, গৌতমের লেখাতেও মাঝে মাঝেই রূপক ব্যবহার করা হয়। কখনও বলেন, থিন অ্যারারুট বিস্কুটের মতো বিবর্ণ উইকেট। আবার কখনও বলেন, পিচে হাল্কা সবুজ ঘাস আছে। খুব ফর্সা লোকের সদ্য দাড়ি কামানো গালে যেমন সবুজ আভা থাকে।
এই সব ভাষার কেরামতি ফলাতে গিয়ে মূল বিষয় থেকে লেখা দূরে সরে যায়। আসলে তাঁর লেখার মূল উদ্দেশ্য অন্যদের কাছে প্রমান করা, ‘দেখো, আমি কত জানি’। খেলা বা খেলোয়াড় সেখানে গৌণ। ধরুন লর্ডসে টেস্ট হচ্ছে, উনি স্টেডিয়ামের বর্ণনা দিতে শুরু করলেন। ইতিহাস বলতে শুরু করলেন। এই করতে করতে কাগজ ফুরিয়ে এল, খেলার খবর মাত্র দু’প্যারা। নেহাত আনন্দবাজারে ছিলেন। লোকজন ভাবত, না পড়লে পিছিয়ে পড়তে হয়। পাছে পিছিয়ে পড়ি! এই কুসংস্কারে কিছউ লোক পড়ত। কিছুই বুঝত না, বোঝার ভান করত।
ইদানীং তিনি আনন্দবাজারের আনন্দ প্লাসের দায়িত্বে ছিলেন। তা এখন অতীত। শনিবারের পত্রিকার দায়িত্ব ছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নাকি তাঁকে না জানিয়েই পত্রিকা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অগত্যা আনন্দবাজার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই ঐতিহাসিক পুন্যলগ্নে তিনি ফেসবুকে নানা লোকের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। গৌতম বলেছেন, তিনি সবরকমের মিডিয়ায় কাজ করতে চান। কাগজ, টি ভি এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমে।
বৈদ্যুতিন মাধ্যমে, তার মানে তো ইন্টারনেট। ওরে বাবা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এতদিন একটু স্বস্তির জায়গা ছিল। এখানে অন্তত কেউ কঠিন ভাষায় কথা বলে না। গৌতম আসা মানে এখানেও পাকামো শুরু হবে। হে ঠাকুর, তখন স্মার্ট ফোনের সামনেও মানে বই নিয়ে বসতে হবে। রক্ষা করো ঠাকুর রক্ষা করো।
(নন্দ ঘোষের কড়চা। বেঙ্গল টাইমসের একটি আকর্ষণীয় বিভাগ। এটি নিছক মজার একটি কলাম। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখুন। একেকদিন তিনি একেকজনের পিন্ডি চটকাতে শুরু করেন। কাল টার্গেট কে? অপেক্ষা করুন। প্রকাশিত হবে ঠিক বেলা বোরাটায়।)