আজ লালকৃষ্ণ আদবানির চুরানব্বই তম জন্মদিন। চল্লিশ বছর আগে তাঁর একটি কথাকে বড় বেশি মনে পড়ছে। সেই কথা ও বর্তমানের ছবিটাই তুলে আনলেন রক্তিম মিত্র।।
জরুরি অবস্থার সময় সরকার আপনাদের একটু নত হতে বলেছিল। আপনারা সেদিন নতজানু হয়েছিলেন।
কথাটা খুব চেনা চেনা লাগছে ? বলুন তো, এটা কার কথা ?
হ্যাঁ, লালকৃষ্ণ আদবানির। সাতাত্তরে যখন মোরারজি দেশাই সরকার এল, আদবানিজি সেই মন্ত্রীসভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ছিলেন। তখনই তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এই কথাগুলি বলেছিলেন।
আজ আদবানির জন্মদিন। সাতাত্তর সালে তাঁর বয়স ছিল ৫০ বছর। আজ তিনি চুরানব্বয়ে পা রাখছেন। এই চার দশক পরেও ছবিটা কিন্তু বদলায়নি। এখন দেশে জরুরি অবস্থা নেই ঠিকই। কিন্তু নত হতে বললে নতজানু হওয়ার সেই ট্রাডিশনটা থেকেই গেছে। সরকারের সব সুরে সুর মেলানোটা যেন জাতীয় ধর্ম হয়ে গেছে। যে সুর মেলাবে না, তার কপালে দুঃখ আছে। সুর না মেলালেই ‘দেশদ্রোহী’ তকমা পড়ে যাবে। কে আর এই তকমা নিতে চায় ? তাই কেবা আগে প্রাণ করিবেক দান, তারই লাগি কাড়াকাড়ি।একটি দুটি বাদে প্রায় সব মূলস্রোত মিডিয়া রাজার গুণগানে ব্যস্ত। ব্যর্থতাকেও সাফল্য বলে চালানোর কী মরিয়া চেষ্টা। সরকারের কাজ হয়ে দাঁড়ায় ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো। আর মিডিয়া সেই পালে হাওয়া দেয়।সে সরকারের বদলে বিরোধীকে প্রশ্ন করতেই ব্যস্ত।
রাজ্যের ক্ষেত্রে ছবিটা আরও ভয়াবহ। স্তাবকতাই এখানে রাজধর্ম। যে সামান্য বেসুরো গাইবে, তার সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ। আরও যতভাবে ক্ষতি করা যায়, সেই চেষ্টার কোনও ত্রুটি থাকবে না।
কর্তা যা বলেন, পারিষদেরা সবসময়ই তার কয়েক গুন বেশিই বলেন। এমনিতেই এই রাজ্যে ধামাধরা পারিষদের অভাব নেই। সেই তালিকায় মিডিয়াও দিব্যি সামিল। তাই মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ গেলে, তাঁর সুরে সুর মিলিয়ে সবাইকে গান গাইতে হয়। সেই ভিডিও দেখলেই বোঝা যাবে, আজ গণমাধ্যমের চরিত্রটা কেমন। দন্ত বিগলিত করে সবাই কেমন গলা মেলাচ্ছেন। গলা না মেলালেই মুশকিল। তিনি যদি রেগে যান!
বাংলার মূলস্রোত মিডিয়া সেই খাতেই বয়ে চলেছে। কেউ স্বেচ্ছায়। কেউ অসহায়ভাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলবেন, আমি সেরা। বাকিদেরও তাই বলতে হবে। কীসের ভিত্তিতে সেরা, কে প্রশ্ন করল, কে খাতা দেখল, জিজ্ঞেস করা যাবে না। মুখ্যমন্ত্রী রেগে যাবেন, এমন কোনওকিছুই করা চলবে না। আদবানির জন্মদিনে তাঁর কথাগুলো বড্ড মনে পড়ে যাচ্ছে। চুয়াল্লিশ বছর আগে কী খাঁটি কথাটাই না বলেছিলেন!