ঈশ্বর, তোমায় স্বাগত

দিব্যেন্দু দে
এখনও মনে পড়ে দিনটা। একসঙ্গে পেয়েছিলাম দুটো ধাক্কা। প্রথম ধাক্কা, কোপার ফাইনালে উঠেও আর্জেন্টিনার হার। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এসেছিল দ্বিতীয় ধাক্কাটা- মেসি আর দেশের হয়ে খেলবেন না।

একটা দলকে ফাইনাল পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া কি সহজ কথা? নাই বা এল চ্যাম্পিয়নের তকমা। তাই বলে তাঁকে সমালোচনায় বারবার এভাবে জর্জরিত করতে হবে? কষ্ট তো আমরাও পেয়েছি। তাই বলে, সেই কষ্ট মেসিকে ফিরিয়ে দিতে হবে?
মেসির যন্ত্রণাটা বেশ বুঝতে পারি। এতকিছু দেওয়ার পরেও যদি তাঁর সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, কষ্ট হওয়াই তো স্বাভাবিক। তবু মানতে পারিনি। মেসি দেশের হয়ে খেলবেন না! তাহলে কোন আর্জেন্টিনার হয়ে গলা ফাটাব ?

messi6

কর্মসূত্রে চা বাগান এলাকায় থাকতে হয়। শ্রমিকদের বস্তিতে অধিকাংশ ঘরেই টিভি নেই। মেসি কে, অনেকে জানেও না। জানার কথাও নয়, হয়ত জানার কোনও প্রয়োজনও নেই। সেদিন সকাল থেকেই মন খারাপ। শ্রমিকদের কেউ কেউ ভেবেছিল, আমার বোধ হয় বাড়িতে কারও শরীর খারাপ। একজন সাহস করে কারণটা জানতে চাইল। তাকে বললাম, মেসি রিটায়ার কর গ্যায়া। তখনই পাল্টা প্রশ্ন এল, কোন সি বাগান মে কাম করতা থা ?
হে ঈশ্বর! সে ভেবে নিল, মেসি হয়ত কোনও বাগানে কাজ করত। সে রিটায়ার করায় আমার মন ভারাক্রান্ত। সেই প্রশ্নটা অন্তত কিছুটা হলেও কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছিল। হৃদয়ের একটা দিক যখন রক্তাক্ত, অন্য দিকটা তখন একটু হলেও হেসেছিল।
আমরা যে সময়ে বেড়ে উঠেছি, তখন মারাদোনা অস্তগামী। যাদুর কথা শুনেছি অনেক, টিভিতে পুরানো ঝলকও দেখেছি। কিন্তু যতই হোক, তিনি তথন অস্তগামী। তবু তাঁর দেশকেই ভালবাসলাম। রোমারিও, বেবেতো, জিদান, রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহো – এমন অনেক তারকা এল। কিন্তু আসনটা কোথাও যেন শূন্য ছিল। যেন মেসির জন্যই আসনটা পাতা ছিল।আমার দেশ ফুটবলের কোন তলানিতে আছে, ফিফায় র্যা ঙ্কিং কত নামল, তা নিয়ে মাথা খারাপ করিনি। আমরা নাইবা রইলাম। মেসি তো আছে। আর্জেন্টিনা তো আছে। বিশ্ব ফুটবলে না হয় ওটাই আমার দেশ।
messi5

কিন্তু প্রিয় দেশে প্রিয় ঈশ্বর থাকবে না ? তাহলে কার পুজো করব ? যতই হিগুয়েন, আগুয়েরা, মাসচেরনাও এসব নাম থাক। মেসি মেসিই। মানছি, সবাইকেই সরে দাঁড়াতে হয়। তাই বলে এত তাড়াতাড়ি ? মেসিকে একবার যদি বোঝানো যেত ? কতবার ভেবেছি, যদি মেসির মুখোমুখি হতাম, নিজের আবেগ, কান্না, ভাল লাগা-মন্দ লাগা তার সামনে তুলে ধরতাম। সে বাংলা ভাষা নাই বা বুঝল, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে নিশ্চয় আমার যন্ত্রণা আর আর্তি বুঝত।

হ্যাঁ, মেসি বুঝেছে। এডগার্ডো বাউজাকে ধন্যবাদ, তিনি অন্তত মেসিকে বোঝাতে পেরেছেন। হে ঈশ্বর, এই আনন্দের মুহূর্তে আর বেশি কথা নয়। আবার আমরা রাত জাগব, আবার আমরা ভোরে উঠব। তোমার জন্য আবার চিৎকার করব। হয়ত কাঁদবও। সেই কান্নাতেও যে অনেক সুখ লুকিয়ে আছে!

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.