ওপেন ফোরাম
রাজীব বিশ্বাস
উপর থেকে নীচ। নানা জায়গায় বামেরা একটা কথা প্রচার করতে মরিয়া। তৃণমূল আর বিজেপির সেটিং আছে। ওরা চায়, বামপন্থীরা যেন কোনও মতেই না জেতে।
মোদি নাকি সংসদে বামপন্থীদের আটকাতে তৃণমূলকে জিতিয়ে দেন। আবার মমতা নাকি বামপন্থীদের আটকাতে বিজেপিকে কয়েকটা আসন দিয়ে দেন। এই জাতীয় আজগুবি তত্ত্ব কার মাথা থেকে বেরোয়, সেটা জানার ইচ্ছে রয়েছে। এই তাত্ত্বিক নেতাদের কথা শুনলে মনে হয়, বিজেপি বা তৃণমূলের আর কোনও লক্ষ্য নেই। নিজেদের কোনও উচ্চাকাঙ্খা নেই। শুধু বামপন্থীদের হারানোটাই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য।
এইভাবে যদি কেউ নিজেদের দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে ভালবাসেন, সেটা তাঁর নিজস্ব সমস্যা। এটুকু বুঝতে পারি, বাস্তবতার সঙ্গে তাঁদের তেমন সম্পর্ক নেই। যে কোনও শাসক চায়, বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাক। সেই হিসেবে তৃণমূলও একসময় হয়ত চেয়েছিল বিজেপি কিছুটা বাড়ুক। তাহলে বাম ভোট কমবে। মোদ্দা কথা, শাসকবিরোধী ভোট যেন একজায়গায় না পড়ে। ঠিক সেই অঙ্কেই এবার চেয়েছিল, বামেরা উঠে আসুক। কারণ বিজেপিতে যাওয়া বাম ভোট আবার বামে ফিরে এলে অঙ্কের বিচারে লাভ হত তৃণমূলের। মোদ্দা কথা, যে যা করে, নিজের অঙ্কেই করে। এর জন্য কোনও সেটিং লাগে না।
এবার মুখোমুখি লড়াই ছিল বিজেপি আর তৃণমূলের। সহজ অঙ্ক, তৃণমূলের সরকার না হলে বিজেপির হত। ত্রিসীমানাতেও বাম ছিল না। তারপরেও বাম নেতৃত্ব প্রচার করে গেলেন, ওদের সেটিং আছে। তৃণমূল বিজেপিকে জিতিয়ে দিয়ে নিজেরা ক্ষমতাচ্যূত হতে চাইবে? বাম যেন ভোট না পায়, সেই জন্য তৃণমল বিজেপিকে সরকারে এনে দেবে? এটা বিশ্বাসযোগ্য?
বিজেপি এবার বাংলার ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া ছিল। এই ছবিটাই দেখেছে সারা বাংলা। দেখেছে সারা দেশ। বিজেপির এই উত্থানে তৃণমূলের ভেতরেও আতঙ্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই আতঙ্ক থেকেই বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলে ভাঙন ধরেছিল। রাজ্যস্তর থেকে বুথস্তরে বিজেপিমুখী একটা চোরাস্রোত তৈরি হয়েছিল। তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাই ভাবতে পারেননি, এবারেও তাঁরা জিতবেন। উল্টোদিকে বিজেপি নেতৃত্ব ধরেই নিয়েছিলেন, রাজ্যে পালাবদল হয়ে গেছে। সরকার গড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ভোটের ফল যাই হোক, ভোটের আগে এটাই ছিল বাস্তবতা। সেখানে বামপন্থীরা কাল্পনিক তত্ত্ব খাড়া করে গেলেন। সেটিংয়ের গল্প শুনিয়ে গেলেন। যা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হল না। এমনকী, এই ফলাফলের পরেও সেটিংয়ের তত্ত্ব থেকে তাঁরা সরে আসছেন না। এই আত্মঘাতী বিশ্লেষণ একেবারে নীচুতলা পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। যদি ঘুরে দাঁড়াতেই হয়, মন থেকে আগে সেটিংয়ের তত্ত্ব ঝেড়ে ফেলতে হবে।
(ওপেন ফোরাম। পাঠকের মু্ক্তমঞ্চ। পাঠকেরা এখানে নিজেদের যুক্তিনিষ্ঠ মতামত তুলে ধরতেই পারেন। সেই মতামতের দায় একান্তই তাঁদের। )