সুমিত চক্রবর্তী
আপনার গিন্নি কি রোজ সন্ধ্যায় সিরিয়াল দেখেন ? এরপরেও আপনার পরিবারে শান্তি বজায় আছে ? হতেই পারে না।
আপনার গিন্নির সঙ্গে আপনার মাও কি সিরিয়াল দেখেন ? দুজনের দুটো আলাদা টিভি ? এরপরেও বলছেন শাশুড়ি-বউ ঝগড়া হয় না ?
ক্রমশ বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠছে এই বোকা বোকা সিরিয়ালগুলো। এক-দুদিন আমিও দেখার চেষ্টা করেছি। রোজ সকাল থেকে এরা কীসের আকর্ষণে টিভির সামনে বসে যায়, বুঝতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু যা বুঝেছি, এখান থেকে ভাল শিক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সারাক্ষণ শুধু কুচুটেপনা। শাশুড়ি ভাবছে কী করে বউমাকে টাইট দেবে। আর ব্উমা ভাবছে একঘর লোকের সামনে কীভাবে শাশুড়িকে অপদস্থ করবে।
সারাক্ষণ ঘরভর্তি লোক। সবাই ড্রয়িংরুমে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে। সবাই বেশ সেজেগুজে। বাড়ির মধ্যে সারাক্ষণ গয়না আপ দামী শাড়ি পরে সবাই দাঁড়িয়ে। যে সব মহিলারা সন্ধে হলেই এইসব সিরিয়াল গিলছেন, তাঁরা বাড়িতে গা ভর্তি গয়না বা দামী শাড়ি পরে থাকেন ? এমনকি খুব উচ্চবিত্ত বাড়িতেও কি সারাক্ষণ সবাই গয়না পরে থাকে? এই সহজ প্রশ্নটুকুও মেয়েদের মাথায় আসে না। সিরিয়াল দেখতে দেখতে ওদের বুদ্ধিগুলো ক্রমশ লোপ পেতে শুরু করেছে।
সিরিয়াল দেখার সময় যদি বাড়িতে কোনও অতিথি আসেন ? তিনি এক গ্লাস জল বা এক কাপ চাও পাবেন না। বরং বাড়ির সব মেয়েরা তাঁর উপর বিরক্তই হবেন। ওই সময় যদি কোনও ফোন আসে ? হয় সেই ফোন বেজেই যাবে। নইলে, ফোন ধরলেও শাশুড়ি বা বউ আপনাকে সিরিয়ালের গল্প শুনিয়ে যাবে।
আর সিরিয়ালগুলোকেও ধন্যি। কোনও গল্পের মাথামুণ্ড নেই। কার কটা বিয়ে, কেউ জানে না। সবাই শুধু ঝগড়া করতেই ব্যস্ত। আমাদের সংসারে ঝগড়া হয়, অশান্তি হয়। আগে থেকেই হত। কিন্তু এই সিরিয়ালগুলো যেন আগুনে ঘি ঢালছে। এই ঝগড়া, এই অশান্তিকে অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জি বাংলা, স্টার জলসা, কালার্স বাংলা- এসব চ্যানেল যে কতটা ক্ষতি করছে, তা অনেকে বুঝতেও পারছেন না। যখন বুঝবেন, তখন পারিবারিক কাঠামোটাই হয়ত ভেঙে যাবে। বাংলাদেশে নাকি মিছিল বেরিয়েছিল, জি বাংলা, স্টার জলসা নিষিদ্ধ করতে হবে। সেখানে কলকাতার এক সিরিয়ালকে নিয়ে নাকি দাঙ্গা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
যাঁরা সচেতন মানুষ, এখনও সময় আছে, বুঝুন। আপনার পরিবারের শান্তি বজায় রাখতে গেলে এইসব সিরিয়াল থেকে বাড়ির মেয়েদের দূরে রাখতেই হবে। নইলে অশান্তি, কলহ থেকে মুক্তি নেই।