দিব্যেন্দু দে
পরপর দুটি ছবি দেখে কিছুটা চমকে গেলাম। দুটিই সরফরাজ খানের। একটি দু’মাস আগের, অন্যটি দু’মাস পরের। একটি ছবিতে তিনি গোলগাল, নাদুস–নুদুস। অন্যটিতে তিনি একেবারে ট্রিম অ্যান্ড স্লিম।
এই মিডল অর্ডার ব্যাটার বেশ কয়েক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর রান করে গেছেন। কিন্তু জাতীয় দলের দরজা দীর্ঘদিন বন্ধই ছিল তাঁর জন্য। বলা হয়েছিল, তাঁর ফিটনেস নেই। মোদ্দা কথা, তুমি মোটা, তাই তোমাকে দলে নেওয়া যাবে না।
কিন্তু ওই শরীর নিয়েই দিব্যি দেড়শো, দুশো রান করছেন। এমনকী, জাতীয় দলের হয়ে সুযোগ পেয়েও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। সুনীল গাভাসকার প্রকাশ্যেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বলেছিলেন, একজন ব্যাটসম্যান কত রান করল সেটা মানদণ্ড হবে নাকি সে কত সেকেন্ডে একশো মিটার দৌড়লো, সেটা দেখা হবে? বিশ্বের সেরা বোলারদের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করতে গেলেও অন্য একধরনের ফিটনেস লাগে, যা সরফরাজের আছে।
কিন্তু গত কয়েক মাসে সরফরাজ যেভাবে নিজের ওজন ঝরিয়েছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো। এর রহস্য কী? ওজন কমানোর দুটোই মূল কথা, খাওয়া কমাও, পরিশ্রম বাড়াও। এই দুটো নিয়ম পালন করলেই অর্ধেক কাজ হয়ে গেল। কিন্তু এই সহজ সত্যিটা আমরা বুঝেও বুঝি না। কী কী খেতে নেই, আমরা বেশ ভালমতোই জানি। কিন্তু সেইসব খাবারের প্রতিই আমাদের আসক্তি বেশি। আমরা হাঁটতে চাই না। আমরা ভোরে উঠতে চাই না। আমরা জাঙ্ক ফুড ছাড়তে পারি না। এরপরেও আমরা আশা করি, আমরা পাতলা হয়ে যাব।
আসলে, সরফরাজের লড়াইটা ছিল নিঃশব্দে। আমি এই করছি, আমি ওই করছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় জাহির করতে যাননি। জিমে নিঃশব্দে ঘাম ঝরিয়েছেন, ট্রেনারের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন। আর নিজের জিভে লাগাম দিয়েছেন। প্রিয় আইটেমগুলো একে একে নিঃশব্দে ছেঁটে ফেলেছেন। জানতেন, ঢাকঢোল পেটাতে গেলে, শুধু ঢাকঢোল পেটানোই হবে। কাজের কাজ কিছু হবে না।
সরফরাজ যেন চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিলেন কীভাবে পাতলা হতে হয়, কীভাবে নিজেকে আরও ফিট করে তুলতে হয়। কিন্তু আমরা কি আদৌ কিছু শিখলাম?
