Categories খেলা

উচ্চতা বেড়ে গেল বাভুমার

সোহম সেন
ছেলেটির বয়স সবে দু’‌বছর। নাম লিহলে। ক্রিকেট কী জিনিস, বোঝার কথা নয়। লর্ডস কী, সেটাও বোঝার কথা নয়। ‘‌চোকার্স’ শব্দটা তো জানার কথাই নয়। কিন্তু সেই ছেলেটিই জড়িয়ে গেল আস্ত এক ইতিহাসের সঙ্গে। বহু বছর পর, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের গৌরবের দিনগুলি ফিরে দেখতে চাইলে, ঘুরেফিরে আসবে ছোট্ট লিহলের ছবিও।
কারণ, তার বাবার নাম তেম্বা বাভুমা। আর লর্ডসে ইতিহাস গড়ার পর উৎসবের মুহূর্তে বারবার ছেলের সঙ্গেই ফ্রেমে দেখা গেছে গর্বিত অধিনায়ককে। কখনও কোলে তুলে নিয়েছেন, কখনও ছেলের হাত ধরে হাঁটছেন, কখনও গ্যালারির দিকে হাত নাড়ছেন। দুরন্ত জয়ের একদিন পরেই ‘‌ফাদার্স ডে’‌। বাবা–‌ছেলের কত ছবি সমাজমাধ্যমে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু সব ছবিকে ম্লান করে দিতে পারে বাভুমা আর লিহলের সেই ছবি।
আরও একজন ছিলেন গ্যালারিতে। তাঁর নাম ফিলা লোবি। বাভুমার স্ত্রী। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী মহলে তিনি শুধু ‘‌বাভুমার স্ত্রী’‌ নন। রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক হিসেবে ‘‌স্বনামধন্য’‌। জোহানেসবার্গ ও কেপটাউন জুড়ে ছড়িয়ে আছে কর্মকাণ্ড। একদিকে যেমন বড় ব্যবসায়ী, অন্যদিকে অনাথ ও দুঃস্থ শিশুদের মূলস্রোতে আনার লড়াইয়েও উজ্জ্বল নাম। তাঁর ভূমিকা ঠিক কী?‌ একটা সময় ছিল, যখন সমাজ মাধ্যমে নানা আক্রমণের শিকার হতে হত বাভুমাকে। কখনও উচ্চতা, কখনও গায়ের রঙ, কখনও মাথার টাক নিয়ে ধেয়ে আসত কটাক্ষ। স্ত্রীর একটাই পরামর্শ ছিল, ‘‌সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকো। ওটা তোমাকে নতুন কিচ্ছু দেবে না। কেড়ে নেবে মানসিক শান্তি।’‌ সেই পরামর্শ কতটা সঠিক ছিল, উৎসবের রাতেও নিশ্চয় ভুলে যাননি গর্বিত অধিনায়ক।
তেম্বা বাভুমা। তারকাদের ভিড়ে তেমন উজ্জ্বল নাম নয়। ক্রিকেটীয় ট্র‌্যাকরেকর্ড যে বিরাট উজ্জ্বল, এমনও নয়। ৬৪ টেস্টে ৩৭০৮ রান, সেঞ্চুরি মাত্র ৪টি। বিশ্ব ক্রিকেট তো দূরের কথা, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটেও সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তাঁকে রাখা যাবে না। কিন্তু দিকপালদের তালিকায় তিনি এসেই গেলেন। তাঁর হাত ধরেই শাপমোচন। দক্ষিণ আফ্রিকা মানেই চেনা ছবি, শুরু থেকে দারুণ খেলে, কিন্তু শেষবেলায় এসে হেরে যায়। এক শব্দে যাকে বলে ‘‌চোকার্স’। সেই‌ তকমা দূর করে ২৭ বছর পর এল আইসিসি ট্রফি। ম্যান্ডেলার দেশের চিরকালীন সাফল্যের ফ্রেমে ঢুকে পড়ল এই দুরন্ত জয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা মানেই কৃষ্ণাঙ্গদের নিপীড়নের দীর্ঘ ইতিহাস। সেখানে তিনিই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার যাঁর ব্যাট থেকে টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরি আসে। ‌প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়কও তিনি। অভিষেক ২০১৬ তে। নেতৃত্ব আসে ২০২১ সালে। কারও ঘাড়ে নেতৃত্বের বোঝা চাপলে নাকি ব্যাটে রান কমে আসে। অনেক তারকার ক্ষেত্রেই এটা সত্যি। অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলে। কিন্তু বাভুমার ক্ষেত্রে ছবিটা উল্টো। অধিনায়ক হওয়ার আগে ব্যাটিং গড় ছিল ৩০–এর নীচে। কিন্তু অধিনায়ক হওয়ার পর গড় ৫৭–‌র ওপর। আর অধিনায়ক হিসেবে!‌ ১০টি টেস্টের ৯টিতে জয়, ১টি ড্র। অর্থাৎ, টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা নেহাত ফ্লুক নয়। পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির ওই ছোটখাটো মানুষটির উচ্চতা এক লাফে যেন অনেকটাই বেড়ে গেল।‌
Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *