দায় শুধু তারকাদের নয়, বোর্ডেরও

বিশ্বজিৎ বসু

বিরাট কোহলি টানা তের বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেননি!‌ রোহিত শর্মাও প্রায় এক দশক ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেননি!‌ এঁরা কি এতটাই বড় তারকা হয়ে গেছেন!‌ শুধু এঁদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বোর্ডও এঁদের তোল্লাই দিয়ে দিয়ে এই জায়গায় এনেছে। এঁরা ধরেই নিয়েছেন, না খেললেও বোর্ড এঁদের কিছুই করতে পারবে না।

মাস খানেক আগে বোর্ড ইশান কিষাণ আর শ্রেয়স আয়ারকে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার নির্দেশ দিয়েছিল। এ অনেকটা ঝিকে শাসন করে বউকে শিক্ষা দেওয়ার মতো। কিন্তু তাতে কোনও কাজই হয়নি। ইশান, শ্রেয়স হয়তো রনজিতে খেলেছেন। কিন্তু তারকা ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেটের দিকে ফিরেও তাকাননি।

গাভাসকার, কপিলদেবদের দেখা যেত, তাঁরা রনজি ট্রফিতে জিততে কতটা মরিয়া থাকতেন। ভারতের হয়ে লম্বা সিরিজ খেলার পরের দিনই রনজি ফাইনাল খেলতে এক শহর থেকে অন্য শহরে উড়ে গেছেন শচীন তেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলিরা। সেবার রনজি ফাইনাল ছিল বাংলা–‌মুম্বইয়ের। একদিন আগেও যাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতকে জিতিয়েছেন, তাঁরাই কিনা রনজি ফাইনালে নেমে পড়ছেন একে অন্যের বিপক্ষে। এবং দায়সারা ব্যাটিং করেছিলেন, এমনও নয়। শচীন যেমন দুরন্ত শতরান করেছিলেন, সৌরভও পৌঁছে গিয়েছিলেন শতরানের দোরগোড়ায়। আবার সেই রনজি ফাইনালের পরদিনই আবার যোগ দিয়েছিলেন জাতীয় শিবিরে। আবার একসঙ্গে নেমেছিলেন দেশের হয়ে খেলতে।

শচীন–‌সৌরভরা কি তারকা ছিলেন না?‌ শচীন–‌সৌরভরা নিয়মিত রনজি ট্রফি, দলীপ ট্রফি, দেওধর ট্রফিতে খেলতে পারেন। বিরাট কোহলি–‌রোহিত শর্মারা পারেন না?‌ নতুন একটা শব্দের আমদানি হয়েছে— ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট। এসব শব্দ আগে কখনও শুনিনি, এই গত কয়েক বছরে বেশি করে শুনছি। মোদ্দা কথা, আইপিএলে খেলো। দেশের হয়ে খেলার সময় যত রকমের বায়না। আর ঘরোয়া ক্রিকেট হলে তো কথাই নেই। সেখানে খেলার কোনও দরকারই নেই। আচ্ছা, টি২০ বিশ্বকাপের পর বিরাট–‌রোহিতরা দেশের হয়ে কদিন খেলেছেন?‌ জুলাই, আগস্ট এই দুমাসে মেরেকেটে সাতদিন। তারপরেও এঁরা দলীপ ট্রফি বা ইরানি কাপে খেললেন না!‌

ঘরোয়া ক্রিকেটকে উপেক্ষা করার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, তার ফল আমরা এই সিরিজে পেলাম। নিজেদের পছন্দের স্পিনের উইকেট। তাতেও কী করুণ পরিণতি!‌ ঘরোয়া ক্রিকেটে খেললে, কিছুটা ম্যাচ প্র‌্যাকটিস পেলে, অন্তত এমন করুণ পরিণতি হত না। সামনেই অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। সেখানে পৌঁছেও ভারত নাকি কোনও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে না। নেটেই নাকি প্রস্তুতি হয়ে যাবে। এটা আরও এক আত্মহননকারী সিদ্ধান্ত। শুধু জিমের ফিটনেস, আর নেট প্র‌্যাকটিস দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট হয় না। এই সত্যিটা না বোঝেন ক্রিকেটাররা, না বোঝেন বোর্ডকর্তারা।

‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.