আমাদের বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে টিভি ছিল না। রেডিও ছিল। খবরের কাগজ থাকলেও তাতে খেলার খবরের বিরাট প্রাধান্য ছিল না। আমরা মফস্বলে বেড়ে উঠেছি। ফলে, লাইন দিয়ে টিকিট কেটে মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখার সুযোগও তেমন ছিল না। তারপরেও ছোট থেকেই পিকে–চুনী–বলরাম নামগুলো শুনে এসেছি। অন্যদের মুখে এঁদের কথা শুনেই মুগ্ধ হয়েছি।
তারও পরে এল সত্তরের দশক। ব্যাটনটা চলে গেল সুভাষ ভৌমিক, সুধীর কর্মকার, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সুব্রত ভট্টাচার্, সমরেশ চৌধুরি, গৌতম সরকার, প্রসূন ব্যানার্জিদের হাতে। এরপর এল আশির দশক। যথারীতি ব্যাটনটা এবার সুদীপ চ্যাটার্জি, বিকাশ পাঁজি, কৃশাণু দে, চিমা ওকেরিদের হাতে। এবার নয়ের দশক। এসে গেলেন বাইচুং, বিজয়নরা। এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম এসেছে। ব্যাটন হাতে তুলে নিয়েছে। আমরাও এঁদের ফুটবলের যাদুতে, স্পর্শে মুগ্ধ হয়েছি।
এখন আইএসএলের রমরমা। দুই প্রধানও এসে গেছে সেই বৃত্তে। এখনও খেলাকে ভালবাসি। কাগজ খুলে সবার আগে খেলার পাতাতেই চোখ রাখি। কিন্তু সেই টানটা যেন অনুভব করি না। বয়স বাড়লে কি এমনটা হয়! সবকিছু থেকে দূরে পালাতে চায়! জানি না, কিন্তু এটাও তো ঠিক, ময়দানে সেই চরিত্র কোথায়! পিকে–অমল দত্তরা তো নেইই। সুভাষ ভৌমিক চলে গেলেন। সুব্রত ভট্টাচার্যও কোচিংয়ের বৃত্ত থেকে অনেক দূরে। দুই ক্লাবে বাঙালি ফুটবলার হাতে গোনা। থাকলেও তাঁদের ঘিরে সেই আবেগ কই? তারই প্রতিফলন পড়েছে মিডিয়াতেও। চরিত্র না থাকলে আকর্ষণও তৈরি করা যায় না। স্টিফেন, ফেরান্দো এঁদের দিয়ে আর যাই হোক, গ্যালারি ভরানো যায় না। নিদেনপক্ষে একটা ব্যারেটো বা ওকোরোও যদি থাকতেন! একটা রয় কৃষ্ণ বা সুনীল ছেত্রিও তো কলকাতায় নেই। সেই করুণ ছবিটাই দেখা গেল এবার আইএসএলের ডার্বিতে। গ্যালারি ফাঁকা! দুই দলের সমর্থকরা কিনা ডার্বি বয়কটের ডাক দিচ্ছেন! সাতের দশক বা আটের দশকে এমনটা ভাবা যেত!
আসলে, কর্তারাও সমর্থকদের আবেগ নিয়ে তেমন চিন্তিত নন। নইলে, এত ঠুনকো কারণে তাঁরা অন্তত ডার্বি বয়কটের ডাক দিতেন না।