সুগত রায়মজুমদার
ফুটবল–বিশ্বে হল্যান্ড অতীতে রীতিমতো তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখেছিল। হল্যান্ডের ফুটবল–শিল্প সারা বিশ্বে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছিল। এই দেশেরই ফুটবলার ছিলেন জোহান ক্রুয়েফ। তাঁকে আধুনিক ফুটবলের জনক বলা হত। এই দেশেরই খেলোয়াড় ছিলেন বাস্তেন, রাইকার্ড, স্নেইডার, রবেন। এঁরা সবসময়ই যেই ক্লাবে খেলুন না কেন, নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। রবেন এখনও খেলছেন বায়ার্ন মিউনিখে। বেশ কিছু বছর ধরে এই দেশ নিজেদের অস্তিস্ত্ব–সঙ্কটে ভুগছিল।
২০১৮ বিশ্বকাপে হল্যান্ডের অনুপস্থিতি বিশ্ব ফুটবলে খুবই বেদনাদায়ক। তারা মূলপর্বেই যেতে পারেনি। এজন্য এই দেশ তাদের কৌলিন্য হারিয়েছিল। ইতালিও এখন সেই সঙ্কটে। তারাও ফেরার অপেক্ষা করছে। ২০১৪–র বিশ্বকাপে বিশ্বসেরা হয়েও জার্মানির বেশ কিছু প্রথম সারির ফুটবলার অবসর নেওয়ায় এবং কোচ লো–র অদূরদর্শিতার জন্য গতবারের ফাইনালে যে দু’জনের সান্নিধ্যে জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেই শার্লে ও গোৎজেকে দল থেকে ছেঁটে ফেলায় দল দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও উঠতি প্রতিভা সানেকে দলে না নেওয়ায় দেশে সমালোচিত হয়েছেন জোয়াকিম লো। এর ফল এবারের বিশ্বকাপে হতেনাতে পেয়েছেন। এজন্য দল হয়ে পড়ে জীর্ণ। জার্মানিও এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। যে জার্মানি গতবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে ৮–১ গোলে হারিয়েছিল, সেই জার্মানি এখন গোলখরায় ভুগছে কোচের বদান্যতায়। সম্প্রতি সেই হল্যন্ডকে দেখলাম উয়েফা নেশনস লিগে সরাসরি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে খেলতে। বিশ্বসেরাকে দেখে তারা এতটুকু হীনম্মন্যতায় না ভুগে বরং বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের অতীত ঐতিহ্যও কম নয়।
সেজন্য প্রথমে বিশ্বসেরাকে প্রথমার্ধে মেপে নিয়ে দ্বিতীয় হাফে অলআউট গিয়ে নাস্তানাবুদ করে ছাড়খার করে ২–০ গোলে জিতে নিজেদের প্রমাণ করেছে, আমরা আবার ফুটবল দুনিয়া শাসন করতে এসে গেছি। দ্বিতীয় হাফে হল্যান্ড কী সুন্দর ফুটবলটাই না উপহার দিল! বিশ্বসেরা তাদের কাছে ৪–৫ গোলেও হারতে পারত। ভাগ্যিস ফ্রান্স এত গোলে হারেনি। না হলে বিশেষজ্ঞরা বলতেন, ফ্রান্স ওভাররেটেড। ফ্লুকে বিশ্বকাপটা পেয়ে গেছে। ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালে ফেবারিট হয়েও জিততে পারেনি অতীতের অভিজ্ঞতার অভাবে। ক্রোয়েশিয়া এতদূর পর্যন্ত বিশ্বকাপে কোনও দিন ওঠেনি বলে ফাইনালে নিজেদের সঠিক প্রয়োগ করতে পারেনি। ফ্রান্সের যেটা ছিল। ফ্রান্স একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েই এসেছিল। সেজন্য ফ্রান্স ফাইনালে অ্যাডভান্টেজে ছিল। হল্যান্ডেরও ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সেজন্যই হল্যান্ড ফ্রান্সের বিরদ্ধে কেঁপে যায়নি। তারা প্রতিপক্ষকে মেপে নিয়ে নিজেদের খেলা খেলে ফ্রান্সকে পর্যুদস্ত করেছে। গতি, আকৃতি, স্কিলের দিক দিয়ে হল্যান্ড ফ্রান্সের চেয়ে অনেকটাই এগিয়েছিল। বিশ্ব ফুটবলের বাইরে থেকেও এই ফর্মে খেলে বিশ্বসেরাকে এক বছর যেতে না যেতেই হারানো যায়, এটা অভূতপূর্ব। আশা করব, হল্যান্ড আবার হৃত মর্যাদা ফিরে পাবে। হল্যান্ডও মরিয়া বিশ্ব ফুটবলে ফিরে আসতে। সম্প্রতি ইতালি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও জার্মানিও তাদের অতীতের মর্যাদা হারিয়েছে। এরাও আবার বিশ্ব ফুটবলে স্বমহিমায় ফিরে আসুক। এটাই বিশ্ববাসীর আশা। সাম্প্রতিক ফর্ম খারাপ হলেও বিশ্বে এই দেশগুলি ফুটবলে সবসময়ই অগ্রগণ্য।