হাওড়ার বোঝা যেন কিছুটা কমে, সেই লক্ষ্যেই সাঁতরাগাছি স্টেশনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রায় পনেরো বছর ধরে এই কথা শুনে আসছি। বেশ কিছু ট্রেনকে হাওড়া থেকে সরিয়ে জোর করে সাঁতরাগাছিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দশ বছরের বেশি সময় ধরে স্টেশনে কাজ চলছেই। এখনও সেই কাজ শেষ হল না। কবে হবে, কেউ জানে না। গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, স্টেশন তৈরি হতে এখনও অন্তত বছর পাঁচেক।
প্রশ্ন হল, একটা স্টেশনের সংস্কার হতে কত সময় লাগে? যেটা ছয় মাস বা এক বছরেই হতে পারত, সেটা দশ বছরেও হচ্ছে না! কাজের গতি নিয়ে কোনও নজরদারি নেই! নাকি ইচ্ছে করেই ঢিমেতালে কাজ হচ্ছে? সাঁতরাগাছি স্টেশন মানে দুর্ভোগের শেষ নেই। ট্রেন থেকে নেমে রাস্তা পর্যন্ত আসা যে কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার, যাঁরা একবার এসেছেন, তাঁরা জানেন। সঙ্গে কোনও বয়স্ক লোক থাকলে বা বাচ্চা থাকলে, এমনকী যদি একাধিক ব্যাগ থাকে, তাহলে স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসা বেশ ঝামেলার। একেক সময় মনে হয়, এর থেকে বোধ হয় এভারেস্ট জয় সহজ কাজ। কোন সিঁড়ি দিয়ে উঠে কোথায় নামবেন, নিত্যযাত্রীরাই মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলেন। স্টেশন থেকে মূল রাস্তা অনেকটাই দূর। একটু বৃষ্টি হলেই সাবওয়ের তলায় জল জমে যায়। তখন সেই জল ঠেলেই বাস ধরতে পৌঁছোতে হয়। বাস ধরা আরেক যন্ত্রণার। নির্দিষ্ট কোনও বাস স্ট্যান্ড নেই। ঠেলাঠেলি করে ভিড় বাসেই উঠতে হবে। কোন বাস কখন ছাড়বে, তার কোনও সময়সীমাও নেই। ফাঁকা বাস দেখে যাত্রী হয়তো উঠে বসেছেন, কিন্তু সেই বাস ছাড়ছেই না। কখন ছাড়বে, তাও বলা হচ্ছে না। ট্যাক্সি পাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার। আর ক্যাব ডাকলে সেই চালকও হিমশিম খেয়ে যান। এত গাড়ির ভিড়ে যাত্রীও চালককে খুঁজে পান না।
সবমিলিয়ে সাঁতরাগাছি স্টেশন যেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ভোগান্তি না বুঝেই একের পর এক ট্রেনকে জোরপূর্বক সাঁতরাগাছি ঠেলে দিচ্ছেন। অথচ, সেখানে ন্যূনতম যাত্রী সাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। কী করলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমে, তা নিয়ে যাত্রীদের মতামত নেওয়া হোক। স্টেশন সংস্কারে এমনিতেই অনেক দেরি হয়েছে। বাকি কাজটুকু অন্তত দ্রুত শেষ করা হোক। আর স্টেশন থেকে বেরিয়ে যানবাহন ধরার বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানসূত্র বের করা হোক। রেল এবং রাজ্যের সমন্বয়টা খুব জরুরি। এই সহজ বিষয়টা রেলকর্তারা যেন ভুলে না যান।
অনুতোষ দত্ত
চন্দ্রকোনা, পশ্চিম মেদিনীপুর