সাসপেন্স আনতে গিয়েই ছবির বারোটা বাজালেন

‌দিব্যেন্দু দে

এই লকডাউনের একটা বড় প্রাপ্তি, বেশ কিছু ছবি দেখার সুযোগ এসে গেল। সেই ছবির তালিকায় পুরনো ছবি যেমন আছে, তেমনি কিছু নতুন ছবিও আছে। কোনওটা টিভিতে। কোনওটা হইচইয়ে। আবার কোনওটা ইউটিউবে। তার মধ্যে একটা হল কিশোর কুমার জুনিয়র।

গত বছর যখন ছবিটা মুক্তি পায়, তখন ইচ্ছে থাকলেও দেখার সুযোগ হয়নি। কারণ, এসব ছবি মূলত মাল্টিপ্লেক্সের জন্যই তৈরি হয়। মফস্বল তো দূরের কথা, জেলা শহরেও আসে না। ফলে, কখন টিভিতে দেখা যাবে বা কখন হইচই–‌এ দেখা যাবে, এই অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকে না।

kishore kumar junior2

প্রথমেই বলে রাখি, ছবিটা তেমন ভাল লাগেনি। কৌশিক গাঙ্গুলি আমার প্রিয় পরিচালক। তাঁর অধিকাংশ ছবিই দেখেছি। টাটকা না হলেও বাসি হওয়ার পরে অন্তত দেখেছি। এই সময়ের অত্যন্ত সংবেদনশীল পরিচালক। আবার একইসঙ্গে কিশোর কুমার আমার প্রিয় গায়ক। এক প্রিয় পরিচালক যখন আরেক প্রিয় গায়ককে নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন, তখন একটা বাড়তি প্রত্যাশা তৈরি হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ছবিটা সেভাবে মন ভরাতে পারল না।

একজন কিশোরকণ্ঠী গায়ককে নিয়ে ছবি। রাতের পর রাত জেগে ফাংশান, শিল্পী হয়েও শিল্পীর মর্যাদা না পাওয়া, কপি সিঙ্গার তকমা নিয়ে থাকা, আর এই কপি সিঙ্গারের তকমার জন্যই সিনেমায় ডাক না পাওয়া। এমন অনেক দিক থাকতে পারত। খ্যাতির আড়ালে অনেক দীর্ঘশ্বাস, লুকোনো যন্ত্রণা উঠে আসতে পারত। শুরুটা ঠিকঠাক এগোচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ অপহরণের গল্পটা কেন যে ফেঁদে বসতে গেলেন!‌ বাংলার একজন কপি সিঙ্গারকে কিনা রাজস্থানের জঙ্গিরা অপহরণ করতে যাবে?‌ কোন যুক্তিতে?‌

প্রথমে শুনেছিলাম, গৌতম ঘোষের জীবনকে সামনে রেখে ছবিটা হবে। আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু রিভিউ পড়ার পরই বুঝেছিলাম, অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। হয়ত তাই তখন আর ছবিটা দেখার আগ্রহ ছিল না। দর্শক হিসেবে আমার মনে হয়েছে, অপহরণের গপ্পো ফাঁদা বা রাজস্থানে নিয়ে যাওয়ার কোনও দরকার ছিল না। একজন কিশোর কণ্ঠীর জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত এই বাংলাতেই সুন্দরভাবে তুলে ধরা যেত। বাড়ি, পাড়া, মঞ্চ, বউয়ের বন্ধু, ছেলের বন্ধু, লোকাল মিডিয়া, অনুষ্ঠানের আবদার। এই বৃত্তেই চমৎকার চিত্রনাট্য তৈরি হতে পারত। এবং কৌশিকবাবু সুন্দরভাবে সেই চিত্রনাট্য তৈরি করতে পারতেন। অহেতুক সাসপেন্স আনতে গিয়েই ছবিটার বারোটা বাজালেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.