জেনেবুঝে মুখ্যমন্ত্রী অপদস্থ হতে চাইবেন কেন?‌

নির্মল দত্ত

লাইভ স্টিমিং কেন হল না?‌ এই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজ। প্রশ্ন তুলছেন আমজনতাও। এর পেছনে যুক্তি যত না আছে, আবেগ আছে তার থেকে ঢের বেশি।

আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। এটা অবশ্যই একটা সদর্থক দিক। আসলে, এই আন্দোলন যে এমন চেহারা নেবে, তা সরকার যেমন ভাবেনি, আমজনতাও ভাবেননি। এমনকী, এই লড়াকু ছাত্র–‌ছাত্রীরাও হয়তো ভাবেননি। কিন্তু গত একমাসে সর্বস্তরের মানুষ এমনভাবে সাড়া দিয়েছেন, যা অভাবনীয়। হয়তো সেই কারণেই সরকার কিছুটা ব্যাকফুটে। এটা যদি কোনও রাজনৈতিক দলের আন্দোলন হত, তাহলে কী হত?‌ ১)‌ মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টাকে পাত্তাই দিতেন না। স্রেফ উপেক্ষা করতেন। নইলে, উল্টোপাল্টা বলতেন। দু একদিন তা নিয়ে বিতর্ক হত। তারপর রেশ থেমে যেত।
২)‌ রাজনৈতিক আন্দোলন হলে সাধারণ মানুষের এই স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখাই যেত না। সর্বস্তরের মানুষ এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তেন না। ৩)‌ দিন রাত এত বেশি মিডিয়া কভারেজও পেত না।

জহর সরকার একেবারেই খাঁটি কথা বলেছেন। এটা যত না বিচার চেয়ে আন্দোলন, তার থেকেও বেশি করে রয়েছে এত বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। যা এই আন্দোলনের মাধ্যমে সামনে আসছে। অনেকেই চাইছেন, লাইভ ক্যামেরার সামনে খোলামেলা এসপার–‌ওসপার হয়ে যাক। এই ছাত্রসমাজের কাছে মুখ্যমন্ত্রী অপদস্থ হোন।

আপনি–‌আমি এমনটা চাইতেই পারি। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রী কেন চাইতে যাবেন?‌ তিনি কেন নিজের বিপর্যয় ডেকে আনতে চাইবেন?‌ আসলে, এটা অনেকটা পালে বাঘ পড়ার মতোই। এতদিন তাঁর সব প্রশাসনিক বৈঠক লাইভ টেলিকাস্ট হয়েছে। সেইসব সভায় তিনি একে ধমকান, তাকে ধমকান। অর্থাৎ, অন্যদের অপদস্থ করে তিনি বেজায় আনন্দ পেয়েছেন। সেটাই দর্শক গিলেছেন। সেটাই দিনভর টিভিতে দেখানো হয়েছে।

কিন্তু তাই বলে দুদিনের পুঁচকে ছোকরারা তাঁকে চমকাবে, সেটা তিনি হজম করবেন কেন?‌ প্রশাসনিক মিটিংয়ে কারা থাকেন?‌ ডিএম, এসপি, বিডিও, ওসি, নানা ধরনের অফিসার। সঙ্গে তাঁর দলের জনপ্রতিনিধিরা। তাঁদের সবার টিঁকি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাঁধা। মুখ্যমন্ত্রী যতই ধমক, চমক দিন, তাঁদের কাছে দন্ত বিগলিত করে হাঁসা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। টিভির মাধ্যমে নিজের পরিবার, এলাকার লোকের কাছে তাঁকে অপদস্থ হতে হচ্ছে। কিন্তু রাগ করার উপায় নেই। এর মধ্যেও তিনি প্রচার করবেন, দিদি তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করেন, তাই একটু ধমক দিলেন। অর্থাৎ, ‘‌আঘাত সে যে পরশ তব, সেই তো পুরস্কার।’‌

কিন্তু এই ছাত্রদের সেই দায় নেই। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে খামোখা খুশি করতে যাবেন কোন দুঃখে!‌ বরং, টিভিতে সবাই দেখছে। মুখ্যমন্ত্রীকে একটু বেকায়দায় ফেলতে পারলে হিরো হওয়ার হাতছানি। এমন কয়েকটা অপ্রিয় প্রশ্ন করবেন, যার জবাব দিতে গেলে মুখ্যমন্ত্রীকে হিমশিম খেতে হবে। এমন কিছু প্রশ্ন ধেয়ে আসবে, হ্যাঁ বললেও মুশকিল, না বললেও মুশকিল। তিনি অন্যকে ধমক দিয়ে এসেছেন। জবাবদিহি করা তাঁর ধাতে নেই। অথচ, টিভির মাধ্যমে সেই অসহায় অবস্থাটাই দেখবে রাজ্যবাসী। তিনি সেই দৃশ্য দেখাতে যাবেন কেন?‌ এমনিতেই যা বিপর্যয় হওয়ার হয়েছে, তার ওপর সেটা আরও বাড়ানোর মধ্যে কোনও বিচক্ষণততা নেই। ফলে, লাইভ স্ট্রিমিং কোনওভাবেই হবে না, এটা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল।

ছাত্রদের বয়স কম। তাঁরা নানা দাবিদাওয়া জানাবেন, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জেনেবুঝে অপদস্থ হতে যাবেন কেন?‌

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.