সরল বিশ্বাস
হঠাৎ তৃণমূল কি সুবোধ বালক হয়ে গেল! যে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যেতে চাইত না, তারা সারাক্ষণ ইন্ডিয়া জোটের কথা বলে যাচ্ছে। তারা সিপিএম বা কংগ্রেসকে আক্রমণ করছে না। তারা বিজেপি বিরোধী শক্তি, এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বভারতীয় স্তরে ঐক্যের কথা বলে যাচ্ছে। এমন দায়িত্বশীল দল তো তৃণমূল ছিল না।
তাহলে হলটা কী? সিপিএম বা কংগ্রেস নেতারা সমানে বলে চলেছেন, রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। অথচ, তৃণমূল স্পিকটি নট। চাইলে তাঁরাও বলতে পারতেন, সিপিএম বা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার কোনও দরকারই নেই। আমরা একাই লড়াই করতে সক্ষম। অতীতেও এককভাবে লড়াই করে দারুণ জয় পেয়েছি। কারও সাহায্য দরকার হয়নি।
কিন্তু সেই তৃণমূল হঠাৎ বৈষ্ণব সুলভ বিনয় নিয়ে হাজির। যেন মেরেছ কলসির কানা, তা বলে কি প্রেম দেব না! হলটা কী? এই তৃণমূলকে দেখতে তো আমরা অভ্যস্থ নই। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এর পেছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। যা এখনও হয়ত সামনে আসছে না। ভবিষ্যতে নিশ্চয় বেরিয়ে আসবে।
তিনি কি সত্যিই বিজেপি বিরোধী সার্বিক জোট চান? অন্তত এতদিন তাঁর আচার–আচরণ দেখে এমনটা মনে হয়নি। হ্যাঁ, মাঠে ময়দানে তিনি কড়া ভাষায় বিজেপি বিরোধী আক্রমণ শানান। কিন্তু রাজ্যসভায় যখনই কোনও বিল ভোটাভুটির জন্য আসে, তখন তৃণমূল অদ্ভুতভাবে হই হট্টগোল করে ওয়াক আউট করে ফেলে। অর্থাৎ, সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেয় না। প্রকারান্তরে সরকারের সুবিধাই করে ফেলে। তাছাড়া, একের পর এক মামলা ইডি বা সিবিআই য়ের মন্থর গতি দেখলেই বোঝা যায়, কে কাকে বাঁচাতে চাইছে।
এই যে কেন্দ্র এতরকমভাবে রিলিফ দিয়ে এল, মাথাদের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারছেন না ( নাকি চাইছে না!), তৃণমূল তার প্রতিদান দেবে না! সরসারি এনডিএ জোটে এখনই যাওয়ার প্রশ্নই নেই। কিন্তু অন্য কোনওভাবেও তো প্রতিদান দেওয়া যায়। জোট জোট আবহ তৈরি করে, শেষমেশ কোনও না কোনও বাহানায় তা ভেস্তে দেওয়া, এটাও তো একধরনের ঋণশোধ। পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করে দেওয়া, এই জোটকে একটু হাস্যকর করে তোলা, এগুলোও কিন্তু বড় ফ্যাক্টর।
একসময় তিতিবিরক্ত হয়ে অটল বিহারী বাজপেয়ী নাকি বলেছিলেন, যাঁদের জয়ললিতা, মায়াবতী ও মমতার মতো বন্ধু থাকে, তাদের আর শত্রুর দরকার হয় না। সময় বদলেছে। নরেন্দ্র মোদি প্রায় সব ব্যাপারেই বাজপেয়ীর উল্টো রাস্তায় হাঁটেন। তিনি হয়ত মনে মনে উপলব্ধি করছেন, যাঁদের মমতার মতো বিরোধী থাকে, তাদের আর বন্ধুর দরকার হয় না।
যে কোনও বিরোধী জোট ভেস্তে দিতে তিনি একাই যথেষ্ট। অতীতে তিনি বহুবার এটা প্রমাণ করেছেন। নিজের প্রতিভা মেলে ধরেছেন। প্রতিভা চাপা থাকে না। এবারও নিশ্চিতভাবেই সেই ভেস্তে দেওয়ার প্রতিভা মেলে ধরবেন। শুধু কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।