প্রশান্ত বসু
দাদাগিরির একটা জনপ্রিয় বিভাগ আছে— গুগলি। নানা রকম ধাঁধা বলে প্রতিযোগীদের একটু ভড়কে দেওয়া। সিএবি নির্বাচনেও এল একটা মোক্ষম গুগলি। যে ধাক্কা সামলে উঠতে পারলেন না বিরোধীরা।
পরবর্তী বোর্ড সভাপতি হিসেবে তাঁর আর থাকা হচ্ছে না। এটা পরিষ্কার হওয়ার পরই কলকাতায় ফিরে সৌরভ গাঙ্গুলি জানিয়েছিলেন, তিনি সিএবি–র নির্বাচনে লড়বেন। সিএবি সভাপতি হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করবেন।
আগেও তিনি সিএবি সচিব ছিলেন। পরে সভাপতি হয়েছিলেন। তারপর গিয়েছিলেন বোর্ডের দায়িত্বে। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী, যে তিন বছর তিনি বোর্ডে ছিলেন, সেই সময়টা সিএবি–র বাইরে ছিলেন। ফলে, সেই সময়টাকে কুলিং অফ ধরাই যায়। সেক্ষেত্রে সৌরভের ফের সভাপতি হতে আইনগত কোনও বাধা ছিল না।
কিন্তু ক্রিকেট প্রশাসনের নির্বাচন তো সবসময় ক্রিকেটীয় ফর্মুলায় হয় না। এখানে অনিবার্যভাবেই এসে যায় রাজনীতির নানা সমীকরণ। বোর্ডে থাকতে গেলে যেমন বিজেপির স্নেহধন্য হতে হয়, ঠিক তেমনই সিএবি–তে থাকতে গেলে মুখ্যমন্ত্রীর অদৃশ্য আশীর্বাদ থাকতেই হয়। অর্থাৎ, সিএবিতে নতুন ইনিংস শুরু করতে গেলে রাজ্য সরকারের মদত ছাড়া সম্ভব নয়।
এখন সৌরভ গাঙ্গুলি সরাসরি দাঁড়িয়ে গেলে তৃণমূল সরাসরি নির্বাচনে জড়াবে না। সিএবি–তে বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিতদেরও গুটিয়েই থাকতে হবে। হয়ত সেই কারণেই নিজের নামটা ভাসিয়ে দিলেন। একসময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হল, যখন বিরোধীরা প্রার্থী দেওয়ার জায়গায় রইল না। তাঁরা আগাম ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন। ঠিক মোক্ষম সময়ে এল দাদাগিরির সেই গুগলি। অর্থাৎ, অফস্টাম্পের বাইরের বলটা পা বাড়িয়ে ছেড়ে দিলেন। নিজে সিএবি সভাপতি না হয়ে এগিয়ে দিলেন দাদা স্নেহাশিস গাঙ্গুলিকে।
তিন দশকেরও বেশি আগে এক রনজি ফাইনাল। বাংলা দলে তখন অনেকটাই অপরিহার্য স্নেহাশিস গাঙ্গুলি। বাংলা ক্রিকেটের আঙিনায় তখনও সৌরভ গাঙ্গুলি নামটা সেভাবে ভেসে ওঠেনি। ফাইনালের আগেরদিনই মোক্ষম চমক। অলরাউন্ডার হিসেবে নেওয়া হল সৌরভকে। বাদ গেলেন দাদা স্নেহাশিস। রনজি জয়ী দলে থাকতে না পারার সেই আক্ষেপ নিশ্চয় এখনও বয়ে বেড়ান স্নেহাশিস।
তিন দশক পর এবার সৌরভের পালা। সেদিন দাদা স্নেহাশিস জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন ভাই সৌরভকে। এবার ভাই সৌরভ সভাপতির আসন ছেড়ে দিলেন দাদা স্নেহাশিসকে। প্রতিদানের একটা বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হল।