সত্যি করে বলুন তো, পরেশবাবুর দোষটা কোথায়

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন:‌ পরেশ অধিকারীকে নাকি সিবিআই জেরা করবে। রাত আটটার মধ্যে হাজির হওয়ার নির্দেশ। কিন্তু এই নির্দেশ কে কাকে দেবেন?‌ প্রথমত, পরেশবাবু রয়েছেন উত্তরবঙ্গে। সেখানে কে তাঁকে কোর্টের নির্দেশ পৌঁছে দেবেন?‌ কীভাবেই বা রাত আটটার মধ্যে নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেবেন?‌

বলা হচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী হয়ে তিনি প্রভাব খাটিয়েছেন। নিজের মেয়েকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। এটা আদালত হয়ত বলেনি। অত্যুৎসাহী চ্যানেল সাংবাদিকরাই অনবরত বলে চলেছেন। আসলে, ইতিহাস বোধের বড্ড অভাব। এমনকী সাম্প্রতিক ইতিহাসের চর্চাটুকুও যেন হারিয়ে গেছে।

পরেশবাবু ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকে। সেখান প্রথমে হলেন চ্যাংড়াবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদের চেষারম্যান। তারপর ২০১৮ নাগাদ যোগ দিলেন তৃণমূলে। কয়েকমাস পরেই তাঁর মেয়ের নাম উঠে এল এসএসসি–‌র প্যানেলে। প্রাথমিক প্যানেলে যাঁর নামই ছিল না, তিনিই কিনা উঠে এলেন একেবারে এক নম্বরে।

পরেশবাবু তখন মন্ত্রী তো দূরের কথা। বিধায়কও ছিলেন না। ২০১৬ তে তিনি হেরে গিয়েছিলেন মেখলিগঞ্জ থেকে। অর্থাৎ, ২০১৮ তে তাঁর পরিচয় প্রাক্তন বিধায়ক। তৃণমূলে এলেও প্রত্যক্ষ প্রভাব খাটানোর জায়গায় ছিলেন না। এমনকি শর্ত দেওয়ার জায়গাতেও ছিলেন না। কারণ, তাঁকে নেওয়ার গরজ তৃণমূলের যত না ছিল, তৃণমূলে আসার গরজ তাঁর একটু বেশিই ছিল।

পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ এ সিটিং এমপি কে বসিয়ে পরেশবাবুকে লোকসভার মনোনয়ন দেওয়া হয়। যথারীতি হারেন। দু’‌বছর পর (‌২০২১)‌ বিধানসভায় মনোনয়ন পেয়ে জেতেন। যেহেতু কোচবিহার থেকে তৃণমূলের মাত্র ২ জন জিতেছেন, স্বভাবতই খুব একটা বিকল্প ছিল না। ফলে, তিনি মন্ত্রী হয়েছেন ২০২১ এ। তার তিন বছর আগেই তাঁর মেয়ের নিয়োগ হয়েছে। ফলে, মন্ত্রী হিসেবে প্রভাব খাটানোর সুযোগ ছিল না।

তাহলে, মোদ্দা কথাটা কী দাঁড়াল?‌ পরেশবাবু দল পরিবর্তন করেছেন। দল বদলের পুরস্কার হিসেবে তাঁর কন্যার নিয়োগ। এখন প্রশ্ন হল, এই নিয়োগের নির্দেশ কে দিতে পারেন?‌ এসএসসি চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ছিল এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার?‌ একেবারে ওপর মহলের নির্দেশ ছাড়া তাঁকে প্যানেলে ঢোকানো সম্ভব ছিল?‌ কর্তারা ধরে আনতে বললে পারিষদরা অনেক সময় বেঁধেই আনেন। এক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। প্যানেলে আনতে বলা হয়েছে। একেবারে সবাইকে টপকে শীর্ষে আনা হল। আর এখানেই বড় বেশি করে চোখে লাগছে।

আরও একটি নিরীহ প্রশ্ন। আচ্ছা, পরেশ অধিকারীর কন্যাকে এসএসসি–‌র প্যানেলে আনতে হবে, দলবদলের জন্য আপাতত তাঁকে এই পুনর্বাসন দেওয়া হবে, এমন একটা সিদ্ধান্ত কি শিক্ষামন্ত্রীরও নেওয়ার ক্ষমতা ছিল?‌ তার থেকে উপরের কারও অনুমোদন ছাড়া তিনিই কি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন?‌

ভাবুন, ভাবুন, ভাবা প্র‌্যাকটিস করুন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.