রোগীরা কেন ভিনরাজ্যে যান, আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন

রক্তিম মিত্র

ঘটা করে আবার শুরু হয়েছে জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক। আর এইসব বৈঠক মানেই লাইভ টেলিকাস্ট। যেটা আধিকারিকদের অনায়াসেই আড়ালে নির্দেশ দেওয়া যেত, সেটা তিনি টিভি ক্যামেরার সামনে লোক দেখিয়ে দেবেন। সারাদিন ধরে চ্যানেলে চ্যানেলে চলবে। পরদিন কাগজের প্রথম পাতায় ঢাউস ছবি সহযোগে খবর। মোদ্দা কথা, কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কাউকে রেয়াত নয়, বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর। কখনও তিনি অফিসারকে ধমক দিচ্ছেন। কখনও দলের নেতা–‌মন্ত্রীদের তিরষ্কার করছেন। এবং যথারীতি, এটা যে দলীয় বৈঠক নয়, এই সহজ কথাটা ভুলে যাচ্ছেন। যেমন মেদিনীপুরের প্রশাসনিক সভার কথাই ধরা যাক। স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে তিনি নাকি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ফেরালে যেন এফআইআর করা হয়, এমন বার্তা দিলেন।

স্বাস্থ্যসাথীর কথাতেই আসা যাক। সরকার যে রেট বেঁধে দিচ্ছে, সেই রেটে যে অধিকাংশ নার্সিংহোম রোগী ভর্তি করতে বা অপারেশন করতে রাজি হবে না, এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। তিনি এমন ভান করছেন যেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যসাথীতেই চিকিৎসা হচ্ছে। দু একটি ক্ষেত্রে হচ্ছে না। অথচ, ঘটনাটা একেবারে উল্টো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নার্সিংহোমগুলি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ফিরিয়ে দিচ্ছে। সরাসরি না ফিরিয়ে বলা হচ্ছে, বেড নেই।

হাসপাতালের কর্তারাও হয়েছেন তেমনি। সরকার যখন মিটিং ডাকে, তখন তাঁরা নিজেদের সমস্যা বা দাবি দাওয়ার কথা বলতে পারেন না। দন্ত বিগলিত করে ইয়েস ম্যাডাম, ইয়েস ম্যাডাম করে চলে আসেন। পরে বলেন, এই রেটে সম্ভব নয়। তখন ঘুরিয়ে নাক দেখান। স্বাস্থ্যসাথী কী কী কারণে মানা সম্ভব নয়, কোন কোন রেট বাড়ানো উচিত, সরকার ঠিকমতো বকেয়া দিচ্ছে কিনা, এগুলো সরকারি ফোরামে বলতে পারেন না। চিঠি লিখেও জানাতে পারেন না। পরে রাগ দেখান রোগীর পরিবারের ওপর।

প্রথমে বলা হয়েছিল, ভিনরাজ্যের হাসপাতালেও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা হবে। কিন্তু সরকার বিল মেটাচ্ছে না। কোটি কোটি টাকা বকেয়া। ফলে, তারাও বকেয়া বিল না পেলে কেনই বা চিকিৎসা করবেন?‌ রাজ্যের নার্সিংহোম গুলিকে সরকার নানাভাবে হেনস্থা করতে পারে। তাদের ভয়ে ভয়ে থাকতেই হয়। কিন্তু ভিনরাজ্যের হাসপাতালের সেই ভয় নেই। তাই এখন মুখ্যমন্ত্রীর হুঙ্কার, আমাদের রাজ্যে এত সুবিধা থাকতে কেন ভিনরাজ্যে যাবে?‌ রোগীরা কেন ভিনরাজ্যে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রশ্ন না করে বরং নিজেকে প্রশ্নটা করুন। সহজ কথা, রোগীরা বা তাঁর পরিবারের লোকেরা বাস্তবটা বোঝেন। তাঁরা লোক দেখানো ফাঁপা কথায় আস্থা রাখেন না।

মুখ্যমন্ত্রী যদি সত্যিই সরকারি হাসপাতালগুলিকে একটু হলেও ঠিকঠাক করতে চান, সবার আগে নির্মল মাজি নামক দুর্বৃত্তটিকে এই পরিষেবা থেকে শত হস্তে দূরে রাখুন। এই একটি লোকের মাতব্বরিতে সরকারি পরিষেবা প্রায় লাটে উঠেছে। রোজ তাঁর নামে ভুরি ভুরি অভিযোগ। তারপরেও তিনি বহাল তবিয়তে থাকেন। চিকিৎসকদের হুমকি দিয়ে যান। সবকিছু জেনেও মুখ্যমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেন না। রবি ঠাকুরের সেই জুতা আবিষ্কারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীকে চামড়া দিয়ে ঢাকার দরকার নেই। আগে নিজের পা–‌কে ঢাকো। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশেও সেই কথাই বলতে ইচ্ছে করছে। অন্যদের হুঙ্কার না দিয়ে আগে এই নির্মল মাজিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। যদি না পারেন, এই ফাঁপা হুঙ্কারগুলো বন্ধ রাখুন।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.