সঞ্জীব রায়
কোথায় কোনটা করতে হয়, আর কোথায় কোনটা করতে নেই, এই বোধটা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আদালতকেও মারপিটের আখড়া বানিয়ে ফেলছেন কেউ কেউ। এঁরা আদৌ আইনজীবী নাকি গুন্ডা, সেই প্রশ্নটাই যেন আরও বড় করে উঠে আসছে।
কলকাতা হাইকোর্টে যে ঘটনা ঘটল, আগে কখনও এমনটা হয়েছে বলে শুনিনি। কালো পোশাক পরা একদল গুন্ডা কিনা আদালত চত্বরে এভাবে চড়াও হলেন বার কাউন্সিলের সভাপতিপর বিরুদ্ধে। তাঁকে শারীরিকভাবে হেনস্থার চেষ্টা হল! বিচারপতির এজলাসের বাইরে এইভাবে গুন্ডামি! সত্যিই, আরও কতকিছু দেখতে হবে!
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ওপর গোঁসা হয়েছে, বোঝা গেল। যেভাবে একের পর এক নির্দেশে শাসক বেআব্রু হয়ে পড়ছে, রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁকে আটকানোর এত তৎপরতা কেন? তিনি তো কাউকে জেলে পোরার নির্দেশ দেননি। তিনি শুধু কয়েকটা জায়গায় দ্রুত তদন্ত করতে বলেছেন। তিনি শুধু কয়েকজনকে জেরা করার কথা বলেছেন। তাতেই এত গাত্রদাহ!
একদল আইনজীবীর দাবি, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে কোনও মামলা দেওয়া যাবে না। এখানেই তাঁরা থামলেন না। বার কাউন্সিরে সভায় সেটা পাস করাতে চাইলেন। কিন্তু তৃণমূলের যা দাবি, বার কাউন্সিলকেও সেই সুরে সুর মেলাতে হবে! এ তো আচ্ছা আবদার! সরকারের বা শাসকদলের চাটুকারিতা কারও কারও স্বভাব হতেই পারে, কিন্তু সবাইকে সেটা করতে হবে!
মিডিয়ার বড় একটা অংশ আজ নিজেদের সুর নরম করে ফেলেছে। মানবাধিকার কমিশনের কার্যত অস্তিত্ব নেই। বিধানসভা কার্যত প্রহসনের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ থেকে প্রশাসন, সর্বত্রই একটা জো হুজুর ভাব। মানুষ তাহলে বিচারের জন্য যাবে কোথায়? একমাত্র ভরসা তো ছিল আদালত। নিম্ন আদালতে কী হয়, সে কথায় নাইবা গেলাম। উচ্চ আদালতও এতটাই দীর্ঘসূত্রিতায় আচ্ছন্ন, তারিখ পিছিয়েই যায়। কবেকার মামলা কবে শুনানি হয়, তখন মানুষ ঘটনার কথা ভুলেই যায়। সেই আদালতের কাজকেও ভন্ডুল করার কী মরিয়া চেষ্টা।
আচ্ছা, এটা কি তৃণমূল পন্থী আইনজীবীরা স্বেচ্ছায় করছেন? নিশ্চিতভাবেই না। কোনও একটা নির্দেশ আসছে, তাঁরা সেটা পালন করছেন মাত্র। তাহলে, আদালতে এমন বিশৃঙ্খলা তৈরির নির্দেশ কারা দিচ্ছেন? কাদের নির্দেশে বিভিন্ন জেলা থেকে এই হামলাবাজদের তুলে আনা হচ্ছে? নেত্রীর একটা ধমকেই এই অরাজকতা ঠান্ডা হয়ে যাবে। কিন্তু তারপরেও তিনি নীরব? এতে সেই গুন্ডাদের কাছে যা বার্তা যাওয়ার, ঠিক পৌঁছে যাচ্ছে।
এতে মুখটা কার পুড়ছে? সরকার একবারও ভাবছে না, আদালতে এমন তাণ্ডবে তাঁদের অপদার্থতাই আরও প্রকট হয়ে আসছে। রাজ্য জুড়ে যে অরাজকতা চলছে, আদালতেও তা টেনে আনা খুব জরুরি? যিনি সব ব্যাপারে অকাতরে অনুপ্রেরণা বিলিয়ে যান, তিনি ভাবুন।