বইমেলার সঙ্গে ময়দানের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। সেটাই বইমেলার আদর্শ জায়গা। আবার সেখানেই ফিরিয়ে আনা হোক। মুম্বই থেকে এমনই দাবি তুললেন অরিত্র ঘোষাল।।
বইমেলা নিয়ে বাঙালি এখনও সেভাবে জেগে ওঠেনি। তাই বইমেলার জায়গা নিয়েও তেমন বিতর্ক নেই। গিল্ডকর্তারা ঘোষণা করেছেন, এবারের বইমেলা হবে করুণাময়ীর সেন্ট্রাল পার্কে। এ নিয়ে কবি–সাহিত্যিকদের তেমন প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি। কে আর সরকারকে চটাতে চায়!
একজন বইপ্রেমী মানুষ হিসেবে মনে করি, ময়দানই হল বইমেলার আদর্শ জায়গা। বাঙালির আবেগের সঙ্গে যেন জড়িয়ে আছে ময়দান। ছোটবেলায় প্রথম গিয়েছিলাম বাবার সঙ্গে। পরের বছর গেলাম বন্ধুদের সঙ্গে। বাড়ি থেকে বাধা আসেনি। আমার বইমেলায় যাওয়াকে বাবা বেশ প্রশ্রয়ের চোখেই দেখতেন। কী কী বই কিনলাম, জানতে চাইতেন। কখনও কখনও তিনিও সেই বই পড়তেন।
আজ বাবাও নেই। কর্মসূত্রে আমিও বাংলার বাইরে। বইমেলারও ঠিকানা বদলে গেছে। ময়দান থেকে উচ্ছেদ হয়ে কয়েকবছর সে ঠাঁই নিয়েছিল মিলন মেলায়। এবার শুনছি নাকি সেন্ট্রাল পার্কে।
একবার বইমেলার সময় কলকাতা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিন দিন ছিলাম। তিনদিনই মিলন মেলায় গিয়েছিলাম। কেন জানি না, মন থেকে ঠিক মেনে নিতে পারিনি। একটা কর্পোরেট কর্পোরেট ব্যাপার। সেই প্রাণটা যেন ছিল না। বইমেলা বলতেই চোখ বুজলে এখনও সেই ময়দানের কথাই মনে পড়ে। একটু ধুলো উড়ত। কেন জানি না, সেই ধুলো বেশ ভালই লাগত। ফেরার সময় পার্ক স্ট্রিট থেকে শিয়ালদার বাস ধরতাম। সেখান থেকে ট্রেনে রানাঘাট।
এবার শুরুতে শুনছিলাম, বইমেলা হবে ইকো পার্কে। সেখানে এখনও যাওয়া হয়নি। তবে গুগল ম্যাপে দেখেছি, জায়গাটা অনেক দূরে। কলকাতার মানুষ হয়ত যেতে পারবেন। কিন্তু জেলা বা মফস্বলের লোকের পক্ষে যাওয়া মুশকিল। ফেরা তো আরও মুশকিল। সেন্ট্রাল পার্ক যোগাযোগের দিক থেকে কিছুটা কাছে। বেঙ্গল টাইমসের একটি লেখায় প্রতিবেদন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, করুণাময়ী আদৌ এই ভিড় সামলাতে পারবে কিনা। আমার মনে হয়, এটি যথার্থ সংশয়। সত্যিই বেশ নাজেহাল হতে হবে সাধারণ মানুষকে। যাঁরা গাড়ি নিয়ে যাবেন, তাঁরা গাড়ি রাখার জায়গা পাবেন না। যাঁরা বাসে ফিরতে চাইবেন, তাঁরাও ঠিকঠাক বাস পাবেন না। অটোতেও বেশ বিশৃঙ্খলা হবে।
জানি না, আর পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে কিনা। কবি–সাহিত্যিকদের নির্লিপ্ততা বেশ অবাক করেছে। স্বাধীন কণ্ঠস্বর সত্যিই হারিয়ে যাচ্ছে। বেঙ্গল টাইমসের মাধ্যমে একটা দাবি জানিয়ে রাখি। আবার বইমেলাকে তার হারিয়ে যাওয়া ঠিকানায় ফিরিয়ে আনা হোক। আদালত বা ফোর্ট উইলিয়াম খুশি হবে কিনা জানি না। তবে বইপ্রেমী মানুষ খুশি হবেন।