রক্তিম মিত্র
কলকাতা প্রেস ক্লাবটা কেন যে আছে! মাঝে মাঝে এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। শোনা যায়, প্রেস ক্লাবের মেম্বার হলে নাকি সস্তায় মদ পাওয়া যায়। গেস্টদের নিয়ে গিয়ে কম টাকায় মদ খাওয়ানো যায়। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই এখন প্রেস ক্লাবের প্রাসঙ্গিকতা। এর বাইরে বিশেষ কোনও গুরুত্ব তার নেই।
সাংবাদিক সংগঠন কেন তৈরি হয়! বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের ওপর আঘাত নেমে এলে এক মঞ্চ থেকে একসঙ্গে তার প্রতিবাদ করার জন্য। অতীতে প্রেস ক্লাবকে তেমন ভূমিকাতেই দেখা গেছে। কোথাও কোনও সাংবাদিক কাজ করতে গিয়ে আক্রাত হলে প্রেস ক্লাব পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়েছে। এমনকী রাস্তায় নেমে মিছিলও করেছে। বাম জমানায় কতবার মুখে কালো কাপড় বেঁধে সাংবাদিকদের মিছিলে হাঁটতে দেখা গেছে।
কিন্তু গত কয়েক বছরে এই প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই শিরদাঁড়াহীন একটি সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আরও একধাপ এগিয়ে বললে, শাসকদলের চাটুকার একটি সংগঠনে পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার ওপর এমন সব আঘাত নেমে আসছে, অথচ, সামান্য বিবৃতি দেওয়ার মুরোদটুকুও নেই। পুরুলিয়ার পুলিশ এসে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল, অকথ্য নির্যাতন করল। কোনও প্রতিবাদ নেই। মাঝরাতে আরামবাগ টিভির সম্পাদকের ঘরের দরজা ভেঙে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হল। প্রেস ক্লাব যথারীতি নীরব। সেই চ্যানেলের অপরাধ কী? যখন লকডাউন চলছে, যখন সরকারের টাকা নেই বলে সরকার কাঁদুনি গাইছে, সেইসময় আরামবাগ থানা থেকে বিভিন্ন ক্লাবকে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি অনুদান দেওয়া হচ্ছে। সেই ছবি তারা তুলে ধরেছিল। ব্যাস, আর যায় কোথায়! একের পর এক মিথ্যে মামলা সাজানো হল তাদের নামে। একটু খোঁজ নিলেই জানা যাবে, যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, অধিকাংশই ভুয়ো। খোদ পুলিশ সুপার ঠিক করে দিচ্ছেন, কে সাংবাদিক আর কে সাংবাদিক নয়। পুলিশের ভূমিকা সমস্ত নির্লজ্জতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
সরকার বা প্রশাসন নিজের অপকর্ম ঢাকতে চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। সাংবাদিককে একটু কড়কে দেওয়া, একটু চমকে দেওয়া, এই সব খেলা জেলায় জেলায় চলছে। সব জেনেও প্রেস ক্লাবের কিছুই করার নেই। করার থাকবেও না। কারণ, কে সভাপতি হবেন, কে সচিব হবেন, কারা কমিটিতে থাকবেন, সব নবান্ন থেকে ঠিক হচ্ছে। এঁদের মুরোদ ওই সস্তায় মদ খাওয়া। এর বেশি আর কিছুই করার নেই।