প্রসূন মিত্র
রাজ্য ক্যাবিনেটে শিক্ষিত, ভদ্র, সজ্জন এমন লোকের সংখ্যা নেহাতই কম। তবু যে কয়েকজন আছেন, সেই তালিকায় অবশ্যই সামনের সারিতেই থাকবেন রাজীব ব্যানার্জি। সচরাচর কুকথা বলেন না। বিরোধীদের সঙ্গেও সৌজন্য রেখেই কথা বলেন। সেই রাজীব হঠাৎ এভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন কেন? তাও আবার নিজের দল সম্পর্কে?
অনেকে বলছেন, রাজীব বিজেপির সঙ্গে কথা চালাচ্ছেন। তিনি বিজেপিতে যেতে পারেন। প্রথমত, রাজীব যদি বিজেপিতে যেতে চান, তার জন্য তাঁকে কারও কাছে দরবার করতে হবে না। একবার ইচ্ছেপ্রকাশ করলেই চলবে। তার জন্য নিজের দলের সঙ্গে এখন থেকে ঝগড়া করার কোনও দরকার পড়ত না।
জেলার রাজনীতিতে তাঁকে কোণঠাসা করার একটা প্রক্রিয়া চলছে। এটা রাজীব বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছিলেন। নিচুস্তরে তৃণমূলে শাস্তি দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া চলছে। সেটা যত না আন্তরিক, তার থেকে বেশি লোকদেখানো। সেই তালিকায় রাজীবের কাছের লোকদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হল। এ অনেকটা ঝিকে মেরে বউকে শিক্ষা দেওয়ার মতো। রাজীবের অনুগামীরা শাস্তির তালিকায়। তাঁদের মুখ চেয়ে রাজীবকেও কিছু না কিছু করতেই হত। পাশাপাশি নিজের দপ্তরের কাজ করতে গিয়ে কীভাবে পদে পদে বাধা পেয়েছেন, সেটা তাঁর থেকে ভাল আর কে জানেন? ছিলেন সেচ দপ্তরে। কারা টেন্ডার পাবেন, তাতে মন্ত্রীর কতটুকুই বা ভূমিকা? শোনা যায়, সেটা ঠিক হত বাইরে থেকে। মোটা অঙ্কের কাটমানি সেই ঠিকানাতেই পৌঁছে যায়। ঠিকাদাররাও জানতেন, মন্ত্রীকে তোয়াজ করে লাভ নেই। আসল জায়গায় দক্ষিণা দিলেই বরাত মিলবে।
সেচ থেকে কিনা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ! এমন নির্বাসন মেনে নেওয়া যে কোনও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন লোকের পক্ষেই কঠিন। যদিও এখন তাঁকে দেওয়া হয়েছে বন দপ্তর। কিন্তু এখানেই বা কাজ করার সুযোগ কতটুকু?
প্রথমত, রাজীব এমন একটি চ্যানেলে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, যে চ্যানেলটি সরকার বিরোধী বলেই পরিচিত। আসলে, তিনি জানতেন, অন্য চ্যানেলে বলে লাভ হবে না। তারা দেখাবে না। যারা দেখাবে, ছোট চ্যানেল হলেও তাদেরই বলা ভাল। সেটাই হয়েছে। তাছাড়া, ফেসবুক লাইভেও ক্ষোভ গোপন রাখেননি। অনেকে ভাবছেন, রাজীবের এই বার্তা জেলার মন্ত্রী অরূপ রায়ের উদ্দেশে। কিন্তু শুধু কি অরূপ রায়! যাঁদের নিশানা করতে চেয়েছেন, তাঁরা ঠিক বুঝেছেন। এর পরিণতি কী হতে পারে, তা বিচক্ষণ রাজীবের অজানা নয়। তখন অন্য দরজা খুলে যেতে সময় লাগবে না।
দল থেকে বেরিয়ে বিদ্রোহী কথা অনেকেই বলতে পারেন। কিন্তু মন্ত্রীত্ব হারানোর ঝুঁকি নিয়েও এমন সত্যি কজন বলতে পারেন! এখানেও আর দশজনের থেকে অনেকটা এগিয়ে রইলেন রাজীব।