অন্য কেউ সিএএ বিরোধীতা করছে, তা তিনি মানবেন না। তাই বিধানসভায় সর্বদলীয় প্রস্তাব আনার দাবিকে ফিরিয়ে দিলেন। গোটা বাংলা প্রতিবাদ করছে, এটা দেখাতে তিনি চান না। তিনি একা প্রতিবাদ করছেন, এটা তুলে ধরতেই বেশি ব্যস্ত। সবই দেরিতে বোঝেন। এটাই হয়ত দেরিতেই বুঝবেন। তখন তিনি নিজেই প্রস্তাব আনতে উঠে পড়ে লাগবেন। লিখেছেন সরল বিশ্বাস।।
একা কৃতিত্ব নেওয়াটা মস্ত এক সংক্রামক রোগ। কেন্দ্র–রাজ্য কেউই বোধ এই রোগ থেকে মুক্ত নয়। কোনও একটি ভাল কাজে আর যেন কারও অবদান না থাকে। কৃতিত্ব নিতে হলে শাসক একলা নেবে। এরকম একটা মানসিকতা অনেকদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে।
উদাহরণ তুলে ধরতে চাইলে অসংখ্য আছে। কিন্তু আপাতত রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা যাক। একদিনের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হল। বাম–কংগ্রেস বিধায়করা দাবি করলেন, সিএএ নিয়ে গোটা দেশে প্রতিবাদ জোরদার হচ্ছে। বাংলার জেলায় জেলায় প্রতিবাদ মিছিল হচ্ছে। বিধানসভাতেও সেই প্রতিবাদ নথিবদ্ধ থাক। সিএএ–র বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব আনা হোক। কেন্দ্র যে আইন পাস করেছে, তা পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হোক।
বিজেপি ছাড়া বাকি সব দলই এই দাবিকে সমর্থন করত। অর্থাৎ ৬ জন বাদ দিলে বাকি ২৮৮ জন (একটি আসন আপাতত শূন্য) পক্ষে। সবাই হয়ত ভোটাভুটিতে থাকতেন না। মোটের ওপর এই বার্তাটা দেওয়া যেত, এই হাউসের সংখ্যাগরিষ্ট সদস্য সিএএ চাইছেন না। এটা কোথাও একটা নথিবদ্ধ থাকত। এত এত মিছিলের থেকেও যা বেশি কার্যকরী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর তা পছন্দ হল না। আর তিনি যখন চাইছেন না, তখন স্পিকারের ঘাড়ে কটা মাথা? অতএব, আলোচনার জন্য বিষয়টি আনাই হল না।
সভার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের অহেতুক আক্রমণ করলেন। আগের দিনের বন্ধের সঙ্গে এই দাবিকে গুলিয়ে ফেললেন। সুজন চক্রবর্তীকে বলে বসলেন, আপনার কথায় আমাকে চলতে হবে? কাউকে দরকার নেই। আমি একাই লড়াই করব।
এই হল মানসিকতা। তোমরা কেন প্রতিবাদ করবে? যা করার, আমি একাই করব। আর কাউকে কৃতিত্বের ভাগ দেব না। ভাবতে অবাক লাগে, এই মানসিকতা নিয়ে রাজ্য চালানো যায়!
বিধানসভায় দু ঘণ্টা আলোচনা হলে কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত? বিরোধীরা তো বলেছিলেন, সরকার প্রস্তাব আনুক, আমরা সমর্থন করব। বিরোধীরা স্বেচ্ছায় সরকারকে সমর্থনের জন্য এগিয়ে আসছে, তা সত্ত্বেও সরকার পক্ষ গলার জোরে তাকে উড়িয়ে দিল। এবং কোনও যুৎসই যুক্তি ছাড়াই। জেলায় জেলায় সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে শক্তি প্রদর্শন করে মিছিল করার থেকে এই প্রস্তাব আনাটা অনেক বেশি জরুরি ছিল। কিন্তু তিনি অন্য কাউকে কৃতিত্বের ভাগ দিতে চান না। তিনি একা লড়াই করছেন, এটাই তাঁকে তুলে ধরতে হবে।
এখনই বলে দেওয়া যায়, বেশ কয়েকটি রাজ্যে হয়ত এই নিয়ে প্রস্তাব আসবে। যেমন, কেরলে আসবে, এখন থেকেই শোনা যাচ্ছে। সেখানে আমাদের রাজ্যের মনোভাবটা তুলে ধরাও খুব জরুরি ছিল। তৃণমূল প্রতিবাদ করছে, করুক। কিন্তু সার্বিকভাবে গোটা বাংলার শিক্ষিত সমাজ এর বিরুদ্ধে— এই বার্তা তুলে ধরাটা কি অনেক বেশি জরুরি ছিল না? কিন্তু সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠা তাঁর কম্ম নয়, এমন বার্তা তিনি বারেবারেই রেখে চলেছেন।
আসলে, আমাদের সরকার সবকিছুই দেরিতে বোঝে। এক্ষেত্রেও হয়ত বুঝবেন। আরও কয়েকটি রাজ্যে এই মর্মে প্রস্তাব আসুক। তখন দেখা যাবে, তিনিও লাফিয়ে পড়েছেন। দেখা যাক, সেই সময়টা কখন আসে।