মিডিয়া সমাচার
সরল বিশ্বাস
ঘণ্টাখানের সঙ্গে সুমন। অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান। কিন্তু দিন দিন কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। সেই এক লোক। এক বিষয়। এক চিৎকার। অসহিষ্ণুতার চূড়ান্ত। কেউ কারও কথা শুনতে রাজি নন। সবাইকে চিৎকার করতে হবে। অন্যকে থামিয়ে নিজের গলার জোর প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সঞ্চালককে তখন বড়ই অসহায় মনে হয়। শোনা যায়, টিআরপি বাড়ানোর জন্য চ্যানেলই নাকি ঝগড়া করতে বলে। এর সঙ্গে তাকে লড়িয়ে দেয়। কিন্তু এতে যে অনুষ্ঠানটা আকর্ষণ হারাচ্ছে, এই সহজ সত্যিটা চ্যানেলগুলো বুঝে উঠতে পারে না। তার থেকে যুক্তি–তর্ক অনেক ভাল। এখানে একজন বলেন। অন্যরা শোনেন। সুস্থ একটা আলোচনার পরিসর থাকে। অনেক গঠনমূলক মতামত উঠে আসে। বিতর্ক থাকলেও তা উপভোগ্য।
পাস ফেল নিয়ে আলোচনাটি বেশ উপভোগ্য। মন কেড়ে নিলেন কবি শ্রীজাত। সবাই নিজের কথা বলতে ব্যাকূল থাকেন। কিন্তু শ্রীজাত হাঁটলেন একেবারে অন্য পন্থায়। তিনি একটি কবিতার বই নিয়ে পোডিয়ামের কাছে এলেন। বই দেখে দেখে কবিতাটি পড়তে লাগলেন। না, নিজের নয়, অগ্রজ কবি জয় গোস্বামীর লেখা কবিতা। শুরুতে মনে হয়েছিল, কয়েক লাইন পড়ে হয়ত নিজের বক্তব্যে আসবেন। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে পুরো কবিতাটাই পড়লেন শ্রীজাত। কবিতা শেষ। তিনি পা বাড়ালেন নিজের আসনের দিকে।
মনে পড়ে গেল কবীর সুমনের একটা গানের লাইন—
আমি চাই মন্ত্রীরা প্রেম করুন সকলে নিয়ম করে
আমি চাই, বক্তৃতা নয়, কবিতা পড়ুন কণ্ঠভরে।
শ্রীজাত বুঝিয়ে দিলেন, জয় গোস্বামীর এই দুরন্ত কবিতার পর আর কিছুই বলার থাকে না। এর সঙ্গে নিজের বক্তৃতা যোগ করার কোনও অর্থই হয় না। আমি যা যা বলতে চাই, তার সবকিছু এই কবিতায় সুন্দরভাবে ধরা আছে। নিজের যুক্তি তুলে ধরতে হলে সবসময় বক্তব্য রাখা খুব জরুরি নয়। অগ্রজ কবির কবিতায় যদি সেই বক্তব্য উঠে আসে, মন্দ কী? এমনিতেই পরশ্রীকাতর হিসেবে কবিদের একটা দুর্নাম আছে। কিন্তু একজন অগ্রজ কবিকে কীভাবে সম্মান জানাতে হয়, সেটাও ওই মঞ্চে দেখিয়ে দিলেন শ্রীজাত।
আরও একটা বার্তা তুলে ধরলেন। সেটা হল সংযম। নিজের কথা না বলেও নিজের মনোভাব তুলে ধরা যায়। এই সংযমটা কজনের আছে! শ্রীজাতের এই সংযম যেন অনুষ্ঠানকে নুতন এক মাত্রা এনে দিল।
(মিডিয়া সমাচার। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় একটি বিভাগ। এখানে মিডিয়া বিভাগের নানা দিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। পাঠকের জন্যও দরজা খোলা। তাঁরাও খোলা মনে নিজেদের মতামত জানাতে পারেন। ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)
(বেঙ্গল টাইমস। দীপাবলি সংখ্যার ই ম্যাগাজিন। উপরের ছবিতে ক্লিক করলেই পড়ে ফেলতে পারেন। ক্লিক করুন। পড়ে ফেলুন। )