বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: দক্ষিণ দিনাজপুরে আবার নাকি উলট পুরান। বিজেপি–তে যাওয়া জেলা পরিষদ সদস্যরা আবার নাকি তৃণমূলে ফিরে আসছেন। তিনজন ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছেন। আরও কয়েকজন আসার মুখে।
বেশ চওড়া হাসি অর্পিতা ঘোষের মুখে। হওয়ারই কথা। বিজেপি শিবির ভেঙে কয়েকজনকে দলে ফেরাতে পেরেছেন। নেত্রীর কাছে কিছুটা হলেও নম্বর বেড়েছে। কিন্তু এই তিনজনের তৃণমূলে আসাটা কি স্বতস্ফূর্ত! ছবি দেখে মনে তো হচ্ছে না। অর্পিতার হাসি বেশ চওড়া। আশেপাশে বাকি নেতাদের মুখেও হাসি। কিন্তু যে তিনজন যোগ দিলেন, তাঁদের মুখ এমন থমথমে কেন? তাঁরা যদি ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসেন, তাঁদের মুখেও তো হাসি থাকারই কথা। এমন থমথমে হওয়ার তো কথা নয়।
আসলে, একটা ছবি হাজার শব্দের সমান। ছবিই বলে দিচ্ছে, কীভাবে তাঁদের দলে ফেরানো হল। একজন সদস্যের বাড়িতে তো তিনবার হামলা চালানো হয়েছে। অভিযোগ, বাকি দুজনকে শাসানো হয়েছে। এমনকী এই হুমকি দেওয়ার কাজে নাকি পুলিশকেও ব্যবহার করা হয়েছে। ওঁদের থমথমে মুখগুলোই বলে দিচ্ছে, গত কয়েকদিনে কী পরিমাণ মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
এতকিছুর পরেও কি জেলা পরিষদ দখলে এল? অঙ্ক যাই বলুন, নিয়ম তো তা বলছে না। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী আইন এনেছিলেন, আড়াই বছর না হলে পঞ্চায়েতের কোনও স্তরেই অনাস্থা আনা যাবে না। সেই নিয়ম অনুযায়ী, এক বছরের মাথায় তো সভাধিপতিকে অপসারণ করার কোনও সুযোগ নেই। অন্তত ২০২১ এর জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সভাধিপতি তো এখনও ফেরেননি। তাহলে জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে এল কীভাবে?
জো হুজুর মিডিয়ায় এই মামুলি প্রশ্নটাও উঠবে না। মোদ্দা কথা, জেলা পরিষদে দখল ফিরে পেতে গেলে সভাধিপতিকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। নইলে পদত্যাগ করাতে হবে। তার জন্য যা যা করা দরকার, তাই তাই করা হবে। ভয় দেখানো বা হুমকি দেওয়া বা বাড়ি আক্রমণ করা। হয়ত দেখা যাবে, সভাধিপতি পদত্যাগ করলেন। নয়তো দেখা যাবে, থমথমে মুখে তিনিও আবার তৃণমূলের পতাকা হাতে নিলেন।
এসব বিষয় নিয়ে কলকাতার মিডিয়ায় তেমন হইচই হবে না। কিন্তু ভেবে দেখুন, এখনও সন্ত্রাস বা গুন্ডামির রাস্তা থেকে পিছিয়ে আসছে না শাসক দল। নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করা হবে পুলিশকে। এরপরেও এই জেলা সভাপতির নম্বর বাড়বে? মানুষ প্রত্যাখ্যান করলেন। তারপরেও ন্যূনতম আত্মসমীক্ষা নেই। গায়ের জোরে পঞ্চায়েত দখল করতে গিয়ে এমন ধাক্কা খেলেন। এরপরেও সেই গাজোয়ারি।
মুখ্যমন্ত্রী জেলার নেতাদের ডেকে ডেকে ভাল ব্যবহার করতে বলছেন। মানুষের কাছে যেতে বলছেন। পুলিশের প্রতি নির্ভরতা কমাতে বলছেন। অথচ, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় সেই একই সন্ত্রাসের আবহ। সেই পুলিশকে ব্যবহার করে জেলা পরিষদ দখলের চেষ্টা। প্রশান্ত কিশোর কেন, তাঁর চোদ্দ পুরুষের ক্ষমতা নেই এই তৃণমূলকে শোধরানোর।