সন্দীপ লায়েক
সদ্য ঘুরে এলাম উড়িষ্যা এবং অবশ্যই চিল্কা। তাই চিল্কা ও চিল্কা ভ্রমনের ব্যপারে কিছু আলোকপাত করাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য।
উপহ্রদ সম্পকির্ত:
————————
প্রথমেই জানাই ভারতের বৃহত্তম সমুদ্র উপকূলবর্তী লবনাক্ত উপহ্রদ চিল্কা। প্রায় এগারশ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই হ্রদ উড়িষ্যার পুরী, খুরদা এবং গঞ্জাম জেলায় অবস্থিত। প্রায় ৫২ টি নদী এই হ্রদে এসে মিশেছে। এটি ভারতের বৃহত্তম এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম লেগুন(উপহ্রদ) এবং ভারতীয় উপমহাদেশ এর মধ্যে পরিযায়ী পাখি দের বৃহত্তম ঠিকানা। শীতের মরশুমে এখানে প্রায় দেড়শ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখতে পাওয়া যায়।
জনশ্রুতি প্রায় 130 টি উপকূলবরতি গ্রামের প্রায় দেড় লক্ষ মৎসজিবির পরিবারের জীবিকা এই হ্রদের মাছের উপর নির্ভরশীল।
একটি 32 কিমি লম্বা সরু চ্যানেল মোটো গ্রামের পাশে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে এই উপহ্রদকে সংযোগ করছে।
ভ্রমণ ও বোটিং সম্পর্কিত:
———————————
প্রথমেই জানাই চিল্কার প্রবেশপথ মূলত তিনটি সাতপড়া, বরকূল ও রম্ভা।
সাতপদা (পুরী জেলা) পুরী বিচের সবচেয়ে কাছে, তাই পুরীর সাইটসিংএ এটিই মূলত সবাই করে থাকেন। এখন পথের অবস্থা খুব ভালো, আগে যেখানে পাঁচঘন্টা যাতায়াতে লাগতো, এখন সেখানে আড়াই ঘন্টাতেই হয়ে যায়। বোটিং এর সময় ডলফিন (অনেকে শুশুক বলেন) ও প্রচুর পাখি দেখতে পাওয়া যায়। গাইডরা এখানে বার বার মনে করিয়ে দেন ঝিনুক থেকে নকল মুক্তো যাতে না কেনেন। পুরী থেকে এখানে যেতে উড়িষ্যা ট্যুরিজমএর OTDC বেস্টই অপশন। 335 টাকা ac বাসের ভাড়া ও শেয়ারে বোট ভাড়া 225 টাকা মাথাপ্রতি। সকাল সাতটায় OTDC বাস। পথে ব্রেকফাস্ট সেরে একটি মন্দির দর্শন করে সাতপদা পৌঁছতে সাড়ে নয়টা। OTDC বাসে সকাল সকাল পৌছে বোটিং এ ডলফিন দেখতে পাওয়ার চান্সও খুব বেশী। বোটিং করতে করতে দেখে নিতে পারবেন সরে যাওয়া মোহনা, রাজহংস আইল্যান্ড(ক্লাসিক বিচ)। বোট থেকে ফিরে দেখে নিন নানান মাছে সমৃদ্ধ মেরিন অক্যোরিয়াম।শুধুমাত্র খারাপ বলতে ওখানের otdc হোটেলের নিম্নমানের খাবার দাবার।
চিল্কার দ্বিতীয় প্রবেশদ্বার হল রম্ভা (গঞ্জাম জেলা)। যতদূর সম্ভব চিল্কা দর্শনে এটিই সবচেয়ে সুন্দর, ভিউ অনেকটা ভাইজাকের মত। লোকজন মূলত গোপালপুর ট্যুরের সঙ্গে রম্ভাকে যুক্ত করেন। OTDC পান্থনিবাস অনলাইনে বুক করে নিরিবিলিতে সপরিবারে দুটো দিন রম্ভাতে থেকে কাটিয়ে আসলে আপনার জীবন সার্থক। এখান থেকে OTDC হোটেলের ব্রেকফাস্ট প্যাক করে বেরিয়ে পড়ুন এবং ওদের বোটে করে দেখে নিন ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড, ঘন্টাসিলা পাহাড়, সঙ্কুদা আইল্যান্ড, ডাইনোসর পার্ক ও হানিমুন আইল্যান্ড। 5 সিটার স্পিড বোট ঘন্টায় 2000 টাকার মত এবং 10 সিটার মোটর বোট 700 প্রতি ঘন্টায়।
চিল্কার তৃতীয় প্রবেশদ্বার হল বরকূল(খোরদা জেলা)। পুরী থেকেও উড়িষ্যা ট্যুরিজমএর OTDC র ac বাসে মিনিমাম দশ জন হলে ঘুরে আসা যায়। জনপ্রতি ভাড়া 660 টাকা। বাসে সাইটসিং এ নারায়নী মন্দির দেখেতে পাবেন। থাকার জন্য বেস্ট OTDC পান্থনিবাস। অনলাইনে বুক করে নিরিবিলিতে সপরিবারে দুটো দিন থেকে কাটিয়ে আসার জন্য একেবারে আদর্শ। পান্থনিবাস থেকেও অর্ধদিবস সাইটসিং এর জন্য অটো ভাড়া করে দেয়। এখান থেকে বোটে করে ঘুরে নিন পাখিদের সম্রাজ্য নলবন আইল্যান্ড ও অসাধারন কালিজাই টেম্পল। চার ঘন্টায় বোটপ্রতি ভাড়া প্রায় 4000 টাকা। ট্রেনে এলে বালুগাঁও স্টেশনে নামুন।
জেনে রাখুন:
—————–
— OTDC হোটেল ও বোট বেস্ট অপশন। প্রাইভেট বোট না নেয়াই শ্রেয়।
— চিল্কায় বোটিং নিরাপদ।
— মুক্তো কিনবেন না।
— শীতকালই চিল্কা ভ্রমনের আদর্শ সময়।
— টুপি কিনতে পারেন। ভাড়াতেও পাবেন। রোদের হাত থেকে স্বস্তি পাবেন।
— সস্তার কিছু বিস্কুট কিনে নিন। বোটে যেতে যেতে সেগুলো ভেঙে জলে ফেলুন। পাখিরা আপনার বোটের চারদিকে উড়ে বেড়াবে।
— ডলফিন দেখতে সবাই দাঁড়িয়ে পড়বেন না, বোটে সমস্যা হতে পারে।