অন্তরা চৌধুরি
জীবন নিয়ে টানাটানি চলছে। এমনিতেই মানুষের জীবনে শান্তি নেই। রাতে ঘুম নেই। সারাক্ষণ শুধু দৌড়ের প্রতিযোগিতা। তার উপর কানের কাছে শুধু ডু অ্যান্ড ডোন্টস। ব্যাপারটা বুঝলেন না তো?
সারাদিন পরিশ্রম করে বাড়ি এসে একটু দেশের–দশের খবর নেব। তার উপায় নেই। শান্তিতে একটু মাননীয় দিদিমণির অগ্নিগর্ভ ভাষণ শুনে নিজেকে শীতল করব, মাননীয় জেঠুমণির মধ্যরাতের কার্যকলাপের জন্য প্রতীক্ষার পারদ গুণব- না। সেসব শোনার জো নেই। ওই এক হয়েছে শখের চ্যানেল। অফবিট ২৪ ঘণ্টা। এদের কোনও কাজ নেই। খবর নেই তো কী হয়েছে, প্যানিক তো আছে। নে শুরু কর্। ধরে বেঁধে সব নামকরা ডাক্তারগুলোকে নিয়ে আসছে। তারাও বেশ সেজেগুজে হেঁ হেঁ করে যাচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন প্যানিক। সবচেয়ে ন্যাকা হল দর্শকগুলো। যা খাচ্ছিস, খা না। এত ফোন করে ন্যাকা ন্যাকা গলায় জিজ্ঞাসা করার দরকার কী?
একদিন বলল বিস্কুট খাবেন না। তার বদলে মুড়ি খান। বেশ, তাই হোক। মুড়ি খেতে শুরু করলাম। দুম করে বলে উঠল, কী সর্বনাশ, খবরদার মুড়ি খাবেন না। গোল গোল সাদা সাদা মুড়ি। তাতেই লুকিয়ে রয়েছে ভয়ঙ্কর বিষ। আশ্চর্য! তাহলে খাব কী? যাই খেতে যাই, তাতেই বারণ। কলা খাবেন না। পাকা পেপে খাবেন না। রাস্তার ধারে ফাস্ট ফুড মানেই ভয়ঙ্কর জীবাণু। সবেই নাকি শরীরে মারণ–রোগ বাসা বাঁধছে। তার মানে, ঘরের খাবারেও বিষ। আবার বাইরের খাবারেও বিষ। দুদিন পরে বলবে, জলও খাবেন না। জেঠুমণির সঙ্গে এদের খুব মিল আছে।
আর এই ডাক্তাগুলোও হয়েছে সেই রকম। তা বলি, হ্যাঁ বাছা। এত সেজেগুজে এসে ফ্রি তে যে এত টিপস দিয়ে যাচ্ছো, তার সাইড এফেক্টটা বুঝলে না! হঠাৎ করে মানুষ যদি এত স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে ওঠে, তোমাদের কাছে তো কেউ যাবে না। তোমার অমন সুন্দর সাজানো চেম্বারে বসে মাছি তাড়াতে তোমার ভাল লাগবে? অবাক পৃথিবী।
এবার অফবিটের ঝুলিতে খাবারের আইটেম শেষ। এবার পেছনে লেগেছে সিএফএল লাইটের। এই লাইট নাকি শরীরে মারাত্মক ক্ষতি করছে। জেঠুমণি সবেতেই নাকি জিএসটি চালু করেছে। কিন্তু এদের এই অপপ্রচারে করেছে কিনা কে কানে!
আচ্ছা, এতদিন তো ওই খাবারই খেয়ে এলাম। কিছু যদি হবার হয়, তো হবে। তাই বলে এত বিধিনিষেধ মানা যায়! ‘মরিতে তো একদিন হবেই ভাই।’ বেশিদিন বাঁচা ভাল নয়। এমনিতেই সারাক্ষণ টেনশন। তাতেই অর্ধেক আয়ু খতম হো গ্যায়া। তার উপর আবার টিভি খুললেই বিদখুটে সব সিরিয়াল। বাকি ছিল নিউজ চ্যানেল। তারাও বাদ গেল না। এখানেই শেষ নয়। যারা এই প্রোগ্রামগুলো গিলছে, তারা আবার আমার বিরাট শুভাকাঙ্খী। একবার করে ফোন করছে, আর জ্ঞান দিচ্ছে। খুব শীঘ্রই রাঁচি যাব। তার আগে ওই অফবিট ২৪–টা একবার দেখে নেব।