সোহম সেন
চাল নেই, ডাল নেই, পয়সার দাম নেই
তবুও টিভির স্ক্রিনে খেলার বিরাম নেই।
প্রায় দুই দশক আগে এমন দুটো লাইন বেরিয়ে এসেছিল নচিকেতার কলম থেকে। তখন সবে দরজায় কড়া নাড়ছে কেবল টিভি। বিদেশি লিগ একটু একটু করে চোখের সামনে ধরা দিচ্ছে। দুই দশক পর খেলা শুধু আর টিভিতে সীমাবদ্ধ নেই। হাতের মোবাইলেও উঠে এলেছে।
খেলার কতরকমের যে চ্যানেল, গুনে শেষ করা যাবে না। আর বারোমাস ক্রিকেট তো লেগেই আছে। এখন শুধু আর দেশের সঙ্গে দেশের লড়াই নয়। এসে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগও। দেশের হয়ে খেলার ব্যাপারে অনেক ক্রিকেটারের মধ্যেই যেন তীব্র অনীহা দেখা যাচ্ছে। ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়াচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। ভেবে দেখুন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা সারা পৃথিবীর ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিরাট অঙ্কে তাঁদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে। অথচ, সেই দেশটা বিশ্বকাপের আঙিনাতেই রইল না। দেশের হয়ে খেলার সেই গর্ববোধটাই হয়ত তাঁদের তাড়া করছে না। আর তেমনই হয়েছে তাঁদের ক্রিকেট বোর্ড। শুনেছি, দিকপাল প্রাক্তন ক্রিকেটারদের নাকি ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। তাঁদের মতামত নাকি শোনাই হয় না। তাঁরা ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকুন, জুনিয়রদের উদ্বুদ্ধ করুন, সে দেশের ক্রিকেট কর্তারা নাকি এমনটা চাইছেন না। বাধ্য হয়ে তাঁদের কার্যত দেশছাড়া হতে হয়েছে। অনেকেই ভিনদেশে চলে গেছেন।
ভাবা যায়, দেশের কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা সম্মানের সঙ্গে দেশে থাকতে পারছেন না! যে দেশে জ্ঞানী–গুণীদের কদর নেই, সেই দেশে বোধ হয় এমনভাবেই বিপর্যয় নেমে আসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তার একটা নমুনা মাত্র। কিন্তু এটা কি শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই সমস্যা? যেভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের রমরমা বাড়ছে, আগামী দিনে অন্যান্য দেশেও এমন সমস্যা দেখা দেবে না তো? দেশের হয়ে খেলার থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলাতেই বেশি আগ্রহ তৈরি হবে না তো! কর্পোরেট সংস্থাগুলির বিশাল অঙ্কের টোপ। ক্রিকেটাররা মাথা ঠান্ডা রাখতে পারবেন তো?
ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেন একটা অশনি সংকেত দিয়ে গেল। অন্য দেশগুলি সেখান থেকে শিক্ষা নিক।