সোহম সেন
কখনও কখনও নন ইস্যুও ইস্যু হয়ে পড়ে। আর তাতেই হারিয়ে যায় আসল ইস্যুগুলো।
সম্প্রতি জাতীয় গেমসে ফুটবলে বাংলা দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অনেকরকম খেলা থাকে। ফুটবলও তার মধ্যে অন্যতম। সার্বিকভাবে বাংলার ফল খুবই খারাপ। পদক তালিকায় বাংলা একেবারেই নিচের দিকে। এমনকী বাংলার মেয়ে স্বপ্না বর্মন সোনা জিতেছেন বাংলা ছেড়ে ভিনরাজ্যের হয়ে।
এই আবহে ফুটবলে সাফল্য সত্যিই কিছুটা হলেও আশাব্যঞ্জক। কিন্তু তাদের কলকাতায় ফেরাকে কেন্দ্র করে যেন কেউ কেউ একটু বেশিই ব্যাকূল হয়ে পড়লেন। বিখ্যাত এক কাগজের ক্রীড়া সম্পাদক তো নিজের বাইলাইনে ঢাউস একটা লেখাও লিখে ফেললেন। দীর্ঘ সেই লেখার নির্যাস, কেন এই খেলোয়াড়দের বিমানে আনা হল না?
এই ছেলেরা গুজরাটে খেলতে যাচ্ছে, তা তো অনেক আগে থেকেই জানা। কজনের ছবি ছাপা হয়েছে? এই দলকে নিয়ে কটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গোটা টুর্নামেন্টে একের পর এক জয় তুলে নিয়েছে এই দলটা। সেই খবর কতটুকু প্রকাশিত হয়েছে? চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেই বা কোন চ্যানেল কতটুকু দেখিয়েছে? প্রাইম টাইমে যথারীতি রাজনীতির খেউড় আর চণ্ডীমণ্ডপ বসেছে।
প্রথম কথা, এটা সন্তোষ ট্রফি নয়। জয়ের কৃতিত্বকে খাটো না করেও এটুকু বলাই যায়, এই টুর্নামেন্টের বিরাট কোনও গুরুত্বও নেই। তাছাড়া, এটা শুধু ফুটবল টুর্নামেন্ট নয়। আরও অনেক খেলা আছে। তারা কীভাবে ফিরে এলেন, তা নিয়ে তো কোথাও কোনও উচ্চবাচ্য দেখছি না। একদল ট্রেনে আসবে, একদল বিমানে আসবে, এমন বৈষম্য কাম্য নয়। ব্যক্তিগত ইভেন্টের কথাই ধরা যাক। ধরা যাক, কেউ সোনা পেলেন। কেউ রুপো পেলেন। কেউ আবার পদক পেলেন না। সবাই গেছেন বাংলার হয়ে। ফেরানো সময় সোনা পাওয়া প্রতিযোগীতে বিমানে, রুপো পেলে ট্রেনের এসি ফার্স্ট ক্লাসে, ব্রোঞ্জ পেলে এসি থ্রি টায়ারে, কিছু না পেলে স্লিপারে— এমনটা করা যায়!
তাছাড়া, চ্যাম্পিয়ন দলকে এসি টু টায়ারে আনা হয়েছে। এটাই বা কম কী? খেলোয়াড়দের কারও কোনও অভিযোগ ছিল বলে মনে হয় না। আইএফএ–র তরফ থেকে বলা হয়েছে, বিমানে পাঠাতে যে টাকা খরচ হত, সেটা বরং ফুটবলারদের হাতে দেওয়া হবে। এটা সত্যিই বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত। তার বদলে কার হাতের তামাক খেয়ে নন ইস্যুকে ইস্যু করা হল, কে জানে! আরও কয়েকটা চ্যানেল বা কাগজে এই মর্মে খবর দেখলাম। বুঝতে অসুবিধা হয় না, কোনও বিশেষ গোষ্ঠী খবরটা খাইয়েছে। এবং বঙ্গীয় সাংবাদিককূল নির্বোধের মতো তা খেয়েওছে।
প্রথমত, দল পাঠানোর মূল দায়িত্ব ছিল বিওএ–র। তার সভাপতি কে? মুখ্যমন্ত্রীর গুণধর ভাই বাবুন ব্যানার্জি। আইএফএ–র সভাপতি কে? মুখ্যমন্ত্রীর দাদা অজিত ব্যানার্জি। কেন এই দু’জন শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর ভাই ও দাদা হওয়ার সুবাদে এমন দুটো শীর্ষপদে বসে থাকবেন, তা নিয়ে তো দীর্ঘ লেখা হতে পারত। কই, হয় না তো!