Categories খেলা

অনেক ভার বইতে হবে জেরেমিকে

পড়শি রাজ্যের ছোট ভাইয়ের আবদার, দিদি তুমি একেবারে সামনের সারিতে বোসো। তোমাকে দেখলে মনে বাড়তি জোর পাব।

দিদি কথা রাখলেন। বসলেন একেবারে সামনের সারিতে। যতবারই ছোট ভাই নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে এগিয়ে গেছেন, দিদি সমানে চিৎকার করে গেছেন।

দিদি সোনা জিতেছিলেন শনিবার। ভাই সোনা জিতলেন রবিবার। এই দিদি হলেন মীরাবাই চানু। আর ভাই হলেন ভারোত্তোলনের নতুন তারকা জেরেমি লালরিননুঙ্গা।

মিজোরাম থেকে উঠে আসা ১৯ বছরের জেরেমি আপ্লুত দিদি চানুর ভূমিকায়, ‘মীরাদিদি আমার কাছে বিরাট এক প্রেরণা। ওর কাছে কতকিছু শিখেছি। শুরুর আগেই আমাকে বলেছিল, জেরেমি, গোল্ড জিতনা হ্যায়। সারাক্ষণ আমাকে উৎসাহিত করে গেছে। এখনও কতকিছু শেখা বাকি আছে।’

অথচ, যখন সোনা জিতলেন, তখন যন্ত্রণায় ছটফট করছেন জেরেমি। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে তৃতীয় চেষ্টায় ১৬৫ কেজি তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বাঁ হাতের কনুইয়ে চোট পেয়ে গেলেন। জেরেমির কথায়, ‘আমি তো মেঝেতেই শুয়েছিলাম। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম। অন্য কিছুই তখন মাথায় ছিল না। অন্য প্রতিযোগীরা কে কত কেজি তুলল, কিছুই জানতাম না। কোচ বিজয় স্যরকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি সোনা পেয়েছি কিনা। উনি হ্যাঁ বলতেই আমি চোখ বুজে ফেললাম। সব যন্ত্রণা কোথায় যেন গায়েব হয়ে গেল।’

একটা সোনা। বদলে দিল অনেককিছু। ভারতের ভারোত্তোলনে নতুন তারকা আইজলের এই যুবক। ২০১৮–র যুব অলিম্পিকেও সোনা পেয়েছিলেন জেরেমি। কমনওয়েলথে তিনি নেমেছিলেন ৬৭ কেজি বিভাগে। স্ন্যাচ বিভাগে তুললেন ১৪০ কেজি। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১৬০ কেজি। মোট ৩০০ কেজি তুলে জিতলেন সোনা। অনেকটাই পিছিয়ে রুপোজয়ী পেলেন সোমাও–য়ের বাইপাভা নেভো। তিনি তুললেন মোট ২৯৩ কেজি (‌১২৭‌‌+১৬৬)।‌ ২৯০ কেজি (‌১৩০+১৬০)‌ তুলে নাইজেরিয়ার এডিডিওর জোসেফ পেলেন ব্রোঞ্জ‌।

কমনওয়েলথে সোনার পাশাপাশি ১৯ বছরের জেরেমি স্ন্যাচ বিভাগে করেন নতুন রেকর্ড। এতদিন পর্যন্ত এই বিভাগে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৩৬ কেজি। জেরেমি প্রথম চেষ্টাতেই তোলেন ১৪০ কেজি। পরে ১৪৩ কেজি চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে প্রথম চেষ্টায় ১৫৪ কেজি, পরের দফায় ১৬০ কেজি। তৃতীয়বার ১৬৫ কেজি চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সবমিলিয়ে ৩০০ কেজিতে আসে সোনা।

অথচ, এই জেরেমির ভারোত্তোলনে আসার কোনও কথাই ছিল না। শুরুটা হয়েছিল বক্সিং দিয়ে। বাবা লালনেথলুয়াঙ্গা ছিলেন জাতীয় স্তরের বক্সার। ছেলেকেও বক্সিংেয়র তালিমই দিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন, ছেলেও তাঁর মতো বক্সার হোক। একটা সময় মনে হল, বক্সিংয়ের থেকে ভারোত্তোলনেই ছেলের সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি। বক্সিং গ্লাভস ছেড়ে বেছে নিলেন অন্য ঠিকানা। সোনা জয়ের পর আপ্লুত মিজোরামের এই ভারোত্তোলক, ‘আমি যখন যেটা করতে চেয়েছি, সেটাই করেছি। কেউ কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আমার বাবা ছিলেন বক্সার। স্বাভাবিকভাবেই তিনি চেয়েছিলেন, আমিও তাঁর মতোই বক্সিংয়ে আসি। কিন্তু একটা সময় দেখা গেল, বক্সিংয়ের থেকে ভারোত্তোলনেই আমার আগ্রহ বেশি। আস্তে আস্তে সেদিকেই ঝুঁকলাম। অন্য যে কোনও বাবা হলে হয়ত মেনে নিতে না। বক্সিংয়েই থাকার জন্য জোরাজুরি করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। আমার সঙ্গে বন্ধুর মতোই মিশেছেন। আমি কী চাই, কোনটা আমি ভাল পারব, বুঝতে চেয়েছেন। খুব খোলা মনেই আমাকে ভারোত্তোলনে পাঠিয়েছেন। সেদিন তিনি পাশে না থাকলে আমি হয়ত এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে পারতাম না। এই পদক তাই পরিবারকেই উৎসর্গ করছি।’‌

পেশিতে চোটের জন্য ক্লিন অ্যান্ড জার্কে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। তার পরেও সোনা আসায় বেশ আপ্লুত। মিজোরামে তিনিই এখন নতুন আইকন। তাঁকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে এই পাহাড়ি রাজ্য। টোকিও অলিম্পিকে ভারতের পদক অভিযান শুরু হয়েছিল ভারোত্তলনকে ঘিরেই। প্যারিস অলিম্পিকে কি নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জেরেমি?‌ বেশি আত্মবিশ্বাসী মিজোরামের এই যুবক, ‘‌বড় আসরে এই প্রথম এমন সাফল্য। এই সবে শুরু। এই যাত্রাপথকে অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। অন্তত প্যারিস অলিম্পিকের আগে থামার কোনও প্রশ্নই নেই।’‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.