সোহম সেন
এতদিন জানতাম, কোনও ব্যক্তিকেই বঙ্গভূষণ–বিভূষণ এসব দেওয়া হয়। এখন দেখছি, এটা ক্লাবকেও দেওয়া যায়। হাসপাতালকেও দেওয়া যায়।
হঠাৎ, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডানের কথা মনে পড়ল কেন?
সত্যিই কি এইসব ক্লাব সম্পর্কে, খেলাধূলা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী শ্রদ্ধাশীল? দুই ক্লাবের কর্তারা গদগদ হয়ে মাঝে মাঝেই মুখ্যমন্ত্রীর নামে স্তুতি করেন। নির্লজ্জের মতো একুশে জুলাই রাজনৈতিক সমাবেশে হাজির হয়ে যান।
আসলে, খেলাকে ভালবাসি বলে যা যা করে চলেছেন, তাতে খেলার ভাল তো হচ্ছেই না। উল্টে মাঠের পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ময়দানের প্রায় সব খেলাকেই মাতব্বরি করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর এক ষণ্ডামার্কা ভাই। তিনি মোহনবাগানেও আছেন। হকিতেও আছেন। বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনেও আছেন। বক্সিংয়েও আছেন। প্রায় সবজায়গাতেই তাঁকে নিতে হবে। আর যেখানে ছবি তোলার সামান্যতম সুযোগ, দন্ত বিগলিত করে তিনি ফ্রেমের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়বেন। মুখ্যমন্ত্রীর এক দাদা ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের কর্তা। বিওএ–র সভাপতি। হঠাৎ ইচ্ছে হল, তিনি আইএফএ–র সভাপতি হবেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাদা বলে কথা। তিনি যখন হতে চাইছেন, কে ঠেকাবে! অতএব, আইএফএ সংবিধান বদলে দিয়ে আলাদা পোস্ট তৈরি করল। একই সংস্থায় সভাপতিও আছেন, চেয়ারম্যানও আছেন। এমন কোনও সংস্থার কথা কেউ জানেন!
তাহলে, মোদ্দা কথাটা কী দাঁড়াল? মুখ্যমন্ত্রী যদি সত্যিই খেলা ভালবাসতেন, যদি সত্যিই এইসব ক্লাবকে ভালবাসতেন, তাহলে তাঁর দাদা ও ভাইটিকে এইসব ক্লাব থেকে দূরে রাখতেন। এই সব ক্লাবে মাতব্বরি করতে দিতেন না।
তিনি স্পনসর জোগাড় করে দেন। তারপর সেই স্পনসর এক বছরও টেকে না। চুক্তি করতে হাজার টালবাহানা। যদিও বা চুক্তি হয়, ক্লাব কর্তা আর স্পনসরদের মুখ দেখাদেখির সম্পর্কটুকুও থাকে না। তারপর যা হয়! অনিবার্য বিচ্ছেদ। আর আইএসএলের পারপরমেন্সের দিকেও যদি চোখ রাখেন, একেবারে শেষ দিকে বরাদ্দ ছিল ইস্টবেঙ্গলের জায়গা।
মোহনবাগানের তবু না হয় কিছু সাফল্য আছে। কিন্তু গত তিন–চার বছর ধরে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা যে নির্লজ্জতার নিদর্শন রেখে যাচ্ছেন, এর পরেও তাঁদের পুরস্কার দেওয়া যায়! অথচ দিলেন। কারণ, ভোট বড় বালাই। সাফল্য নাইবা এল। ক্লাবের পরিবেশ না হয় রসাতলেই গেল। তাই বলে কি সমর্থকদের তুষ্ট করা যাবে না?
তাছাড়া, নজরুল মঞ্চ ভর্তি করবে কে? যাঁরা পুরস্কার পেলেন, তাঁরা বড়জোর বাড়ির লোকেদের আনবেন। ওই দিয়ে তো আর হল ভরবে না। ওই দিয়ে বড়জোর দেড়শো–দুশো লোক হয়। তাহলে উপায়! পিজি হাসপাতালের নাম ঘোষণা করে দাও। নির্মল মাজি সব ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের আসার ফরমান জারি করে দেবেন। ক্লাবগুলোকে ডেকে দাও। অরূপ বিশ্বাস তিন ক্লাবের কর্তাদের কানে কানে ঠিক বলে দেবেন, লোক আনতে হবে কিন্তু। ব্যাস, নজরুল মঞ্চ ভরানো নিয়ে আর কোনও দুশ্চিন্তা রইল না।